১৫০০ কোটি টাকা খেলাপি: ইমাম গ্রুপের মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ
চট্টগ্রাম ভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ইমাম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী জেবুন্নেছা আক্তারকে দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গ্রুপটির কাছে অন্তত ১৫টি ব্যাংকের পাওনা ১৫০০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান রোববার এ আদেশ দেন।
বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম।
তিনি জানান, ইমাম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ আলীর ১৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৫০০ কোটি টাকা। ঋণ খেলাপির দায়ে তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে বেশিরভাগ মামলা হয় ২০১২-১৩ সালে। দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে মামলা চালিয়েও ব্যাংকগুলো অর্থ আদায়ে সমর্থ হয়নি। ১৮৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা আদায়ে সোনালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার দায়েরকৃত একটি জারি মামলার প্রেক্ষিতে আদালত মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী জেবুন্নেছা আক্তারকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে।
এই আটকাদেশ কার্যকরের জন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই আদেশে আইজিপি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তাদের গ্রেপ্তার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ১৪ মে ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৮৬ কোটি খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করায় ইমাম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ আলী ও তার ছেলে আলী ইমামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
একসময় ন্যাশনাল ক্রেডিট এন্ড কমার্স ব্যাংকের (এনসিসি) পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন মোহাম্মদ আলী। এই পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সহজেই ঋণ সুবিধা নিতেন তিনি। পরে ব্যাংকে তার শেয়ারের পরিমাণ ২ শতাংশের নিচে নেমে যাওয়া এবং বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণখেলাপি হয়ে পড়ায় এনসিসির পর্ষদ থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়।
নব্বই'র দশকে অবৈধপথে পণ্য আমদানি করে ব্যবসার জন্য চট্টগ্রামে তিনি 'ব্ল্যাকার মোহাম্মদ আলী' নামে পরিচিতি পান। এর আগে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ-টেরিবাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন তিনি।
সেসময় খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের বাজারের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতো ইমাম ট্রেডার্স। পরে গ্রুপের ব্যবসা সম্প্রসারণ হয় গার্মেন্টস, যন্ত্রপাতি আমদানিসহ নানা খাতে। এসব খাতে বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের বেশিরভাগ বিনিয়োগ হয়েছে জমি কেনায়।
২০১০ সালের পর থেকে ভোগ্যপণ্য ও ভূমি ব্যবসায় লোকসান শুরু হলে প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করা বিভিন্ন ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ ঋণ আটকে যায়। ২০২০ সালে বিভিন্ন ব্যাংকের দায়ের করা ৫৫ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর গোপনে আরব আমিরাতে পালিয়ে যান ইমাম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী জেবুন্নেছা আক্তার।