আমাদের অর্থনীতি টিনেজার…তাই নজরদারি করতে হচ্ছে: পরিকল্পনামন্ত্রী
বিকাশমান অর্থনীতিতে মূলধনের জোগানের উৎস হতে পারে পুঁজিবাজার। এজন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ক্যাপিটাল মার্কেট অবহেলিত হওয়া ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এসময় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টিনেজারের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, "আমাদের অর্থনীতি অত্যন্ত শক্তিশালী, এতে কোন সন্দেহ নেই। আমাদের অর্থনীতি, টিনেজার অর্থনীতি।"
মন্ত্রী বলেন, টিনেজার হওয়ায় এর একটা উদ্যম রয়েছে, কিছুটা লাফালাফিও আছে, তাই নজরদারিতে রাখতে হচ্ছে। "টিনেজারদের মা-বাবাকে যেমন তাদের নজরদারি করতে হয়, তেমন আমাদেরকেও গ্রোয়িং অর্থনীতিকে নজরদারি করতে হচ্ছে, এটাকে ফিডিং করতে হচ্ছে। আর এই ফিডের প্রধান উপকরণই হচ্ছে ক্যাপিটাল। যে যাই বলুক না কেন এটার (অর্থনীতির) দরকার টাকা, টাকা এবং টাকা। টাকা কয়েক রকম হয় তরল অর্থ, সম্পদ ও ফ্রোজেন মানি। এ সকল অর্জন হবে যদি আমরা ক্যাপিটাল মাকের্টে শক্তি বৃদ্ধি করতে পারি।"
আজ রোববার (৪ জুন) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) এর যৌথ উদ্যোগে সিএমজেএফ অডিটরিয়ামে বাজেট পরবর্তী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ খাত হওয়া সত্ত্বেও বাজেটে এনিয়ে কোনো প্রস্তাবনা না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেন স্টেকহোল্ডাররা। এর আগে তারা যেসব সুপারিশ করেছিলেন, সেই দাবিগুলো পুনরায় তুলে ধরে বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য নতুন কোন কিছু আরোপ করা নাহলেও, কোন প্রণোদনাও দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে বাজেটে পুঁজিবাজার সম্পর্কে কোন আলোচনা না থাকায় আমাদের মনে হচ্ছে এখাতটি সরকারের কাছে একেবারেই অবহেলিত। এতে বিনিয়োগকারীরাসহ খাত-সংশ্লিষ্ট সবাই হতাশ হয়েছে।
পুঁজিবাজার সাংবাদিক ফোরামের- সাধারণ সম্পাদক আবু আলীর সঞ্চালনায় 'বাজেট ২০২৩-২৪: প্রেক্ষিত পুঁজিবাজার' শীর্ষক সভায় সূচনা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান।
সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, ডিবিএ প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, স্টক মার্কেট বাজেটে অবহেলিত ,এটি একটি বড় মেসেজ। আপনাদের পক্ষ থেকে আমি সংশ্লিষ্টদের কাছে এটি পৌঁছে দিব। এছাড়া আমি আপনাদের দাবিগুলো শুনলাম, এগুলো নিয়ে আমি সংশ্লিষ্টদের আলোচনা করবো।
মন্ত্রী বলেন, ''ক্যাপিটাল মার্কেট ডমিনেন্ট বা ড্রাইভ দিতে পারে এমন অর্থনীতি আমাদের হয়নি। আমরা সেদিকে যাচ্ছি। উই আর অন দ্যা ওয়ে। উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশে যেতে হলে প্রয়োজন অর্থের। পুঁজিবাজার সেই অর্থায়নের উৎস হতে পারে। আমরা সেদিকে যাবো, পুঁজিবাজারের মাধ্যমে আমাদের অভিযাত্রা শুরু হবে"।
মন্ত্রী পুঁজিবাজার বিষয়ক দাবিগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, আমি মনে করি এখন আমরা যে পর্যায়ে পৌঁছেছি আমাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগের তুলনায় অনেক দক্ষ, আমাদের বেটার টেকনোলজি, বেটার বিজনেস কমিউনিটি রয়েছে, তাই এখন আর অগ্রিম আয়কর (এআইটি) দরকার নেই, এটি তুলে দেযা যায়। সংশ্লিষ্ট অথরিটি সবার সঙ্গে আলোচনা করে এটি তুলে দিতে পারে।
দ্বৈত কর থাকা উচিৎ নয় বলেও তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এটি কেন হবে, একজন মানুষ ট্যাক্স তো একবারই দিবে। এর কারণ ব্যাখ্যা হওয়া করা উচিত, এর গভীরে গিয়ে দেখা উচিত।
এছাড়া মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো পূঁজিবাজারে নিবন্ধিত হওয়া উচিত বলেও তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এই আলোচনা সাত আট বছর আগেও শুনেছি। এখনও শুনছি, কিন্তু বছরের পর বছর তারা লিস্টেড না হয়েই ব্যবসা করছে আমাদের দেশে। এ বিষয়ে আমাদের আরো চাপ প্রয়োগ করতে হবে।'
বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের পার্থক্য ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকম, তামাক ইত্যাদি খাত- এর আওতার বাহিরে।
মাত্র ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কর রেয়াত উদ্যোক্তাদেরকে তালিকাভুক্তি হতে উদ্বুদ্ধ করে না। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের পার্থক্য বাড়ানোর দাবি করেন বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান।
এছাড়া তিনি, লভ্যাংশের উপর দ্বৈত কর প্রত্যাহার, বন্ডের উপর অগ্রীম চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করা, লেনদেন কর নামিয়ে ০.০১৫ শতাংশ (শূন্য দশমিক শুন্য ১৫) করা যা বর্তমানে ০.০৫ শতাংশ (শূণ্য দশমিক ০৫ শতাংশ) রয়েছে করার দাবিও জানান। বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ডকে পুঁজিবাজার এক্সপোজার এর বাহিরে রাখলে পুঁজিবাজার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি দাবি জানান।
ছায়েদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য বাজেটের ভাল দিক হলো নতুন করে কোন কিছু আরোপ করা হয়নি। তবে হতাশার ও খারাপ দিক হলো পুঁজিবাজারের জন্য কোন প্রণোদনাই নেই, এমনকি পুঁজিবাজর সম্পর্কে কোন আলোচনাও নেই।'
পৃথিবীর অনেক দেশেই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে পুঁজিবাজার। কিন্তু সম্ভাবনা থাকার পরও কেন যেন আমাদের দেশের পুঁজিবাজার সেই অবস্থানে যেতে পারছে না মন্তব্য করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএইসই) এর চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু বলেন, ''সরকারের একটু নীতি সহায়তা পেলে আমাদের পুঁজিবাজার অনেক কিছুই দিতে পারবে। এখানে সেই সম্ভাবনা রয়েছে। পুঁজিবাজারই রাজস্বের বড় জোগান দিতে পারবে।''
চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচেঞ্জ (সিএসই) এর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম বলেন, ''আমরা আশা করেছিলাম বাজেটে পুঁজিবাজার বিষয়ে কিছু থাকবে। কিন্তু এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কিছুই রাখা হয়নি। অথচ ব্যাংক দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য নয়, দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারের বিকল্প নেই।