সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ; নবজাতকের মৃত্যু, মা লাইফ সাপোর্টে
রাজধানীর গ্রিন রোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় মাহবুবা রহমান আঁখি (২৫) নামে এক নারী এখন লাইফ সাপোর্টে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মারা গেছে নবজাতক সন্তানও।
বুধবার (১৪ জুন) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন আঁখির চাচাতো ভাই শাখাওয়াত হোসেন শামীম।
শামীম বলেন, "ফেসবুকে ভিডিও দেখে ডা. সংযুক্তা সাহার কাছে নরমাল ডেলিভারি করাতে চেয়েছিল আমার বোন। সে অনুযায়ী তার স্বামী ব্যবস্থা নিয়েছিল।"
কুমিল্লার তিতাস উপজেলা থেকে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডেলিভারির জন্য এসেছিলেন মাহবুবা আঁখি। তিনি সেন্ট্রাল হাসপাতালের অধ্যাপক ডা: সংযুক্তা সাহার তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
শুক্রবার রাতে আঁখির প্রসব বেদনা উঠলে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ডা. সংযুক্তা সাহার অ্যাসিসটেন্টের সাথে ফোনে কথা বলে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আনা হয় আঁখিকে। হাসপাতালে ভর্তির পরে নরমাল ডেলিভারির জন্য নির্ধারিত ৪০ মিনিটের ব্যায়াম করানো হয়।
শামীম বলেন, "আমার বোন সুস্থ-স্বাভাবিক ছিল। আমরা বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। রাত দুইটার পরে দেখলাম তারা দৌড়াদৌড়ি করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। সেখানে কাটাছেড়া করে সংযুক্তা সাহার অ্যাসিসটেন্ট ডা. শাহাজাদী। তারা যখন সামলাতে পারেনি, তখন ডা. মিলিকে ডাকে।"
"পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে ডা. মিলি আসেন। তিনি আমাদের জানান, অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা নেই। দেখি আমি কি করতে পারি। তখন আমরা জানতে চাইলাম আমাদের ডাক্তার নেই, তাহলে অপারেশন করলো কে? সংযুক্তা সাহা নেই জানলে আমরা আমাদের বোনকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতাম," যোগ করেন শামীম।
তিনি আরও বলেন, "তখন আমরা বুঝতে পারি আমাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। হাসপাতালের পক্ষ থেকে সন্তোষজনক কোনো পদক্ষেপ দেখতে না আমরা ৯৯৯ নাম্বারে কল দেই।"
"ধানমন্ডি থানা থেকে পুলিশ আসে। পুলিশ এসে কথা বললে তারা রোগীকে বিএসএমএমইউ'র সিসিইউতে নিতে বলে। সেখানে সিট খালি না থাকায় পরদিন বিকেলে ল্যাবএইডে সিসিইউতে নেওয়া হয়," যোগ করেন শামীম।
তিনি বলেন, "কিন্তু আমার বোনটি এখন লাইফ সাপোর্টে আছে, তার সব অরগান ফেইল করেছে, ডাক্তাররা হয়তো তাকে মৃত ঘোষণা করবে। বাচ্চাটা তো আগেই মারা গেছে।"
এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে আঁখির পরিবার।
যোগাযোগ করা হলে সেন্ট্রাল হাসপাতালের পরিচালক এম এ কাশেম বলেন, "এ ঘটনায় চিকিৎসক ও নার্সসহ ওই হাসপাতালের ১১ জন কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এছাড়া, ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে বলে জানান তিনি।
আঁখির বর্তমান শারিরীক পরিস্থিতির বিষয়ে ল্যাবএইডের ডা. এম এ শামীম বলেন, "ভেন্টিলেটরে থাকা অবস্থায় ওই রোগীকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে আমাদের এখানে আনা হয়। রোগীর বাঁচার আশা খুবই কম।"
এ ঘটনায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডাঃ এহতেশামুল হক চৌধুরী টিবিএসকে বলেছেন, "ডাক্তার দেশে না থাকলেও যদি বলে যে ডাক্তার আছে, তাহলে সেটি প্রতারণা। এ বিষয়ে রোগীর স্বজনেরা বিএমডিসিতে অভিযোগ করলে বিএমডিসি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।"
আঁখি ইডেন কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তার চিকিৎসায় অবহেলার প্রতিবাদে ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে বৃহস্পতিবার আজ (১৫ জুন) সকাল ১০টায় নীলক্ষেত মোড়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করবে।