জামালপুরে সাংবাদিক নাদিম খুনের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ-প্রতিবাদ
গত ১৪ জুন জামালপুরে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তদের হামলায় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম খুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিক উভয়ই তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন।
এ হত্যার বিচার দাবি করে সাতক্ষীরা, জামালপুরসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় সংবাদকর্মীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ করেছেন।
অনলাইন পোর্টাল বাংলানিউজ২৪ ডটকম-এর প্রতিনিধি এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভি'র বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি নাদিমের (৪২) নৃশংস হত্যার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রতিবাদ জানিয়েছেন নেটিজেনরা।
নাদিমের পরিবারের দাবি, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় নাদিমকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
নাদিম হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে। তবে মূল অভিযুক্ত বাবু এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন গোলাম কিবরিয়া সুমন, মো. তোফাজ্জল, আইনাল হক ও মো. কফিল উদ্দিন।
শুক্রবার (১৬ জুন) এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মইন বলেন, নাদিমের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে কাজ করছে র্যাব।
'খুনিরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে,' বলেন তিনি।
১৪ জুন হামলার পর মারাত্মক আহত নাদিম পরেরদিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসাপাতেল মারা যান। শুক্রবার সকালে তাকে বকশীগঞ্জ উপজেলার নীলাখিয়া ইউনিয়নের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তার জানাজায় অংশ নেওয়া সাংবাদিকেরা এ হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
নাদিমের মা আলেয়া বেগম শুক্রবার বকশীগঞ্জের বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
'আমার ছেলে বকশীগঞ্জে অনেক সাহসী সাংবাদিক ছিল, সবার চেয়ে বেশি সাহসী ছিল,' বলেন তিনি।
আলেয়া বেগম বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও একই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবুকে তার ছেলেকে খুনের জন্য দায়ী করেছেন।
'বাবু চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে খবর লেখার জন্য আমার ছেলেকে খুন করেছে। আমি ওর ফাঁসি চাই। আপনাদের সবাইকে এ হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে,' অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আগে বলেন তিনি।
এক বিবৃতিতে নাদিম হত্যার নিন্দা জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অভ জার্নালিস্টস (আইএফজে)। সংস্থাটি জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় এ বছর খুন হওয়া চতুর্থ সাংবাদিক নাদিম — আর বাংলাদেশে তৃতীয়।
সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্থনি বেল্যাংগার বলেছেন, 'সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের খুন অগ্রহণযোগ্য এবং এটি বাংলাদেশের সংবাদকর্মীরা যেসব ঝুঁকির মুখে থাকেন তার প্রতিনিধিত্ব করে।… আইএফজে এ ন্যাক্কারজনক খুনের তীব্র নিন্দা এবং এ হত্যাকাণ্ডের তাৎক্ষণিক পূর্ণ তদন্তের দাবি জানাচ্ছে।
নাদিম হত্যার প্রতিবাদ জানাতে ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির দাবি করতে শুক্রবার সকালে মানববন্ধন করেছেন সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সদস্যরা।
'দেশে কোনো সুশাসন নেই। সাংবাদিকদের খুনের বিচার হয়না বলে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে,' এক বিবৃতিতে বলেন স্থানীয় সাংবাদিক নেতারা।
অপরাধীর পরিচয় কেবল অপরাধী মন্তব্য করে তারা আওয়ামী লীগ নেতা বাবুর গ্রেপ্তার এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
ভুক্তভোগীর পরিবার এবং সহকর্মীরা বলছেন, ১০ মে বকশীগঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে একজন নারী দাবী করেন চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু তাকে গোপনে বিয়ে করেছিলেন কিন্তু স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছেন।
নাদিমসহ আরও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এ ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেন। ১৭ মে মাহমুদুল আলম বাবু নাদিমসহ আরও এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে একটি মামলা দায়ের করেন।
কিন্তু ৩০ মে ট্রাইব্যুনাল ওই মামলা খারিজ করে দেন।
নাদিমের প্রতিবেদনটি বাংলানিউজ২৪ ডটকম-এ প্রকাশিত হয়। ১৪ জুন মামলা খারিজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন নাদিম।
হামলার সময় নাদিমের সঙ্গে থাকা আরেক স্থানীয় সাংবাদিক জানান, 'বুধবার বাড়ি ফেরার পথে রাত ১০টা নাগাদ আমাদের ওপর হামলা করা হয়। হামলায় নাদিম মোটরসাইকেল থেকে সোজা মাটিতে পড়ে যান। হামলাকারীরা নাদিমকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে তারা মারাত্মক আহত নাদিমকে মাটিতে ফেলে রেখে চলে যায়।'
ওই সাংবাদিক আরও জানান, 'নাদিমকে প্রথমে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।'