ভোটের পর সিলেটে ফিরল লোডশেডিং
সিটি নির্বাচনের পরদিন থেকেই সিলেটে ফের শুরু হয়েছে লোডশেডিং। আজ বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সারাদিনে কয়েক দফা আসা-যাওয়া করে বিদ্যুৎ। সকাল থেকে সন্ধ্যার আগপর্যন্ত এলাকাভেদে তিন থেকে চারঘন্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে।
এরআগে বুধবার সিলেট সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আগে কয়েক দিন অনেকটা লোডশেডিংমুক্ত ছিল সিলেট মহানগর।
জ্বালানি সংকটে গত মাসের শেষ দিক থেকে দেশজুড়ে ভয়াবহ লোডশেডিং শুরু হয়। এসময় সিলেটের বিভিন্ন উপজেলাও দিনের বেশরিভাগ সময় বিদ্যুৎহীন থাকতো। তবে ব্যক্তিক্রম ছিলো সিলেট নগর। গত প্রায় ১৫ দিন লোডশেডিং মুক্ত ছিল মহানগরী। এইসময়ে ভোটের প্রচারে ব্যস্ত ছিল সিলেট শহরে। তবে বুধবার নির্বাচন শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পরিস্থিতি বদলে গেছে। ভোটের পরদিন থেকেই শুরু হয়েছে লোডশেডিং।
নগরের গোয়াইটুলার বাসিন্দা মো. আব্দুর রহমান বলেন, 'ভোটের আগের কয়েকদিন বেশ ভালোই কেটেছিল। শহরে কোনো লোডশেডিং ছিল না। তবে ভোটের পরের দিন থেকেই আবার লোডশেডিং শুরু হল। আমাদের ভোট নেয়া হয়ে গেছে, আওয়ামী লীগের জয় হয়েছে, এখন আর আমাদের খবর রাখার দরকার নেই তাদের। তাই লোডশেডিং শুরু করেছে।'
শহরের রিকাবীবাজার এলাকার বাসিন্দা তপন দত্ত জানান, 'সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত লোডশেডিং ছিল। লামাবাজার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত প্রত্যেকবার আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চারবার লোডশেডিং হয়েছে।'
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারের সময়ই আলোচনায় উঠে আসে লোডশেডিং। লোডশেডিংয়ের কারণে ভোটে নেতিবাচক প্রভাব পরারও শঙ্কা করা হচ্ছিল।
এ অবস্থায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গত ১৮ এপ্রিল নগরীর বাগবাড়িস্থ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অফিসে গিয়ে কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। এ সময় কর্মকর্তারা তাদের ঘাটতির কথা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে জানান।
তখন কর্মকর্তারা জানান, সিলেট মহানগরীতে বর্তমানে প্রতিদিন ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে প্রতিদিন সরবরাহ করা হচ্ছে বর্তমানে ১৩০ থেকে ১৪০ মেগাওয়াট। প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে।
পরে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে সিলেটের বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণে অনুরোধ জানান।
২ জুন নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকে সিলেট শহরে লোডশেডিয়ের পরিমাণ কমতে থাকে। বুধবার ভোটের দিন পর্যন্ত মহানগরের লোডশেডিং প্রায় শূন্যের কোঠায় ছিল। তবে বৃহস্পতিবার নির্বাচনের পরদিন সিলেটে দেখা দিয়েছে লোডশেডিং।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে বৃহস্পতিবার বিদ্যুতের চাহিদা ১৭১ দশমিক ৫ মেগাওয়াট। আর সরবরাহ মিলেছে ১১৩ দশমিক ৫ মেগাওয়াট। ফলে ঘাটতি থাকছে ৫৮ মেগাওয়াট। এই ঘাটতি মেটাতে লোডশেডিং করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনের দিন নগর এলাকাগুলোকে লোডশেডিংমুক্ত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এখন নির্বাচন শেষ হওয়ায় পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরেছে।
তবে পিডিবি সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, গত কয়েকদিন বৃষ্টি ছিল। ফলে চাহিদাও ছিল কম। আজ বৃষ্টি নেই, গরমও বেড়েছে। একারণে চাহিদা বেড়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
'সিটি নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সিলেট মহানগর এলাকায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় লোডশেডিং কম ছিল। বর্তমানে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। লোড পাঠানোর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিলেট নগরী এলাকায় ৩৩.৮২ শতাংশ লোডশেডিং করছি' - তিনি যোগ করেন।