বায়ু থেকে শক্তি: দৈনিক জাতীয় গ্রিডে ২০ মেগাওয়াট সরবরাহ করছে দেশের একমাত্র বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র
কক্সবাজারের খুরুশকুল গেলে সহজেই চোখে পড়বে দীর্ঘ ১০টি বায়ুকল। আশেপাশের ভূচিত্র থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ২০০ মিটার উঁচু টাওয়ারগুলো চোখ এড়ানোর উপায় নেই।
বাতাসের গতি বাড়লেই, ঘুরতে থাকে টার্বাইনের ব্লেড বা পাখা। আগে অবশ্য পুরো এলাকায় ছিল জলমগ্ন, আর বায়ুর প্রবাহকে বাধা দেওয়ার মতো কিছুই ছিল না এখানে।
সেই পরিবর্তন এনেছে এসব বায়ুকল। যা দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রের অংশ । তবে এখাতে কেবল যাত্রা শুরুই হয়েছে বাংলাদেশের।
২০৪১ সাল নাগাদ মোট বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করতে চায় সরকার, সেই লক্ষ্যের দিকে যাত্রা ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দৈনিক গড়ে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরীক্ষামূলকভাবে সরবরাহ করছে জাতীয় গ্রিডে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পরীক্ষামুলক উৎপাদন শুরু হয় গত ২৫ মে। এরমধ্যে গেল একমাসে ২৭ লাখ কিলোওয়াট ঘন্টা বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর বা নভেম্বরের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে এই উইন্ড ফার্ম। তখন জাতীয় গ্রিডে দৈনিক সরবরাহ করা হবে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
চীনের অর্থায়নে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড। আর ৯০০ কোটি টাকায় এ প্রকল্পের সব যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে চীন থেকে।
এপর্যন্ত কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে ১০টি টারবাইন স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে ৭টি।
ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার মুকিত আলম খান বলেন, কক্সবাজারে স্থাপিত ৬০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটি গত ২৫ মে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। 'এরপর ২৬ মে থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ প্রদান শুরু করেছে। গত একমাসে ২৭ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। আশা করছি, এই প্রকল্পের বাকি কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয়ে এটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে।'
তিনি জানান, পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ ক্ষেত্র সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় উপকূলবর্তী ৩টি ইউনিয়নে নির্মাণ করা হচ্ছে ২২টি টারবাইন।
ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি লিমিটেডের পরিচালক সাজিদ রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'প্রতিটি বায়ুকল থেকে ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। আর টাওয়ারের জন্যও কম জায়গা লাগে। এটার একটা বড় সুবিধা হচ্ছে যখন বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন করি তখন আশপাশের এলাকায় মাছের চাষ, ধানের চাষসহ সব ধরনের চাষবাস করা যায়। ফলে বায়ুবিদ্যুৎ অর্থনীতিতে বিরূপ কোন প্রভাব ফেলে না। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের জাতীয় গ্রিডে ক্লিন এনার্জি সরবরাহ করতে পারছি আমরা।'
প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল কাদের গণি বলেন, এই মুহুর্তে কক্সবাজার ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে প্রতিদিনই জাতীয় গ্রিডে ১৫ থেকে ২১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরীক্ষামূলকভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। 'টারবাইন ১০টি হলেও এখন চালু রয়েছে ৭টি। বাকি ৩টির কিছু সংযোগের কাজ বাকি রয়েছে। তা দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হবে। বিকেলের দিকে বাতাস বেশি থাকাতে ৭টি টারবাইনের প্রতিটি থেকে ৩ মেগাওয়াট করে ২১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। যা কক্সবাজার পাওয়ার স্টেশনে যুক্ত হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, মোট ২২টি টারবাইনের মধ্যে ১০টি স্থাপন শেষ হয়েছে। বাকি ১২টি স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করি, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর বা নভেম্বরের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনে তার সরকারের পরিকল্পনার কথা জানান বিশ্বনেতাদের। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ চলমান রয়েছে।