সরকারি কর্মচারীদের ৫ শতাংশ আপৎকালীন বিশেষ ভাতা জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে
উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য যে মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে আপৎকালীন বিশেষ ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করেছেন, সেটি আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে।
ফলে আগামী অর্থবছরের নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি আপৎকালীন ভাতা হিসেবে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এ সুবিধা পাবেন না।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি চাকরিজীবীরা বর্তমানের মূল বেতনের চেয়ে ৮.৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি বেতন পাবেন। তবে আপৎকালীন ভাতার ফলে মূল বেতন বাড়বে না। এটি গ্রস বেতনে যুক্ত হবে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ কার্যকর করার বিষয়ে কাজ চলছে। বাজেট পাশ হওয়ার পর দ্রুত এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে পরিপত্রটি যেদিনই ইস্যু করা হোক না কেন, তা ১ জুলাই থেকেই কার্যকর হবে।
সর্বশেষ জাতীয় পে স্কেল অনুযায়ী, গ্রেড অনুযায়ী সরকারি কর্মীদের ইনক্রিমেন্ট ৩.৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। বর্তমানে ২০টি গ্রেডে প্রায় ১২.৫ লাখ চাকরিজীবী কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে উচ্চতর কয়েকটি গ্রেড বাদে সব গ্রেডে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট হয়। গ্রেড-১-সহ উচ্চতর কয়েকটি গ্রেডের কর্মকর্তারা ৪.৫ শতাংশ থেকে ৩.৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পেয়ে থাকেন।
সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ১৫ থেকে ২০তম গ্রেডে রয়েছেন 8 লাখের বেশি চাকরিজীবী, যারা ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পান। ফলে বেশির ভাগ কর্মীর বেতনই ১০ শতাংশ হারে বাড়বে।
যদি পুরো অর্থবছরজুড়ে এই বিশেষ ভাতা অব্যাহত থাকে তাহলে ২,০০০ কোটি টাকা বাড়তি লাগবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য দেওয়ার সময় সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ নতুন করে প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সরকারি কর্মচারী যারা আছেন, তাদের বিশেষ বেতন হিসেবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ আপৎকালীন সময়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। অর্থমন্ত্রী আশা করি বিষয়টি গ্রহণ করবেন। আমরা ৫ শতাংশ মূল বেতনের সঙ্গে বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে তাদের দেব।'
এ বিষয়ে সোমবার অর্থবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এ বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সারসংক্ষেপটি অর্থমন্ত্রী চুড়ান্ত করলে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করবে অর্থ বিভাগ।
অর্থবিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, 'এখন পর্যন্ত আমরা যতটুকু জানি, শুধু সরকারি চাকরিজীবীরা এই আপৎকালীন ভাতা পাবেন। রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আপৎকালীন ভাতা পাবেন না।'
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিষয়টি দ্রুত শেষ করে জুলাইয়ের বেতনের সঙ্গে এই বাড়তি ভাতা দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে। কোনো কারণে সেটি সম্ভব না হলে পরের মাসে পরিপত্র হবে। তবে কার্যকর হবে জুলাই থেকেই। ফলে পরের মাসের বেতনে জুলাইয়ের ভাতা এরিয়ার হিসেবে পেয়ে যাবেন কর্মীরা।
২০১৫ সালে যে বেতন স্কেল ঘোষণা করা হয়, সেখানে বলা হয়েছিল, প্রতি বছর সরকারি কর্মচারীদের বেতন ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হবে । সে অনুযায়ীই এতদিন হয়ে আসছে। এ বছর মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হবে।
পরে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি হিসাব পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, ইনক্রিমেন্টের পর অতিরিক্ত ৫ শতাংশ বেতন বাড়াতে দরকার হবে ২,০০০ কোটি টাকা, ১০ সতান বাড়ালে দরকার হবে ৪,০০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে করা হয় ৭৩ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৮১ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, মূল বেতনের ৫ শতাংশ আপৎকালীন ভাতা দেওয়ার জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দের অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে না। বরাদ্দের অর্থ দিয়েই তা সংস্থান করা যাবে।