সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা লঙ্ঘন করলে সরকারি কর্মকর্তারা শাস্তি পাবেন
সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা লঙ্ঘন করলে সরকারি চাকরিজীবীরা শাস্তির মুখে পড়বে বলে সতর্ক করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ''ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে 'সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯'- অনুযায়ী পরিহারযোগ্য বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট দিচ্ছেন বা বিভিন্ন ডকুমেন্টস শেয়ার করছেন এবং ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান/সরকারকে বিব্রত করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। যা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সার্ভিস রুলস পরিপন্থী ও অগ্রহণযোগ্য আচরণ।''
আরও বলা হয়েছে, ''প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল, অনেকক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হানিকর এবং সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী অসদাচরণের পর্যায়ভুক্ত অপরাধ।''
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ''এই পরিপ্রেক্ষিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের 'সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা ২০১৯'- এর সুষ্ঠু ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো। এর ব্যতয় হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অথবা কর্মচারীর বিরুদ্ধে 'সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯', 'সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯' এবং 'সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা, ২০১৮' অনুসারে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।''
বলা হয়েছে, ''সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ ধরনের বিভিন্ন ব্যত্যয়সমূহ পরিলক্ষিত হওয়ায় রেগুলেটরি মন্ত্রণালয় হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগকে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।''
জনপ্রশাসনে সংস্কারকে কেন্দ্র করে গত নভেম্বর থেকে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের বিরোধ দেখা দিয়েছে। উপসচিব সচিব পদে পদোন্নতি, সরকারের দেওয়া গাড়ির ঋণ, পদায়ন ইত্যিাদি নিয়ে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা এক পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আর বিসিএসের অন্যান্য ২৫ টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা আরেক পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন উপসচিব পদে সকল পদোন্নতি তাদের ক্যাডার থেকে দিতে হবে। আর অন্যান্য ক্যাডারের প্রতিনিধিরা বলছেন পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা অনুযায়ী উপসচিব পদে পদোন্নতি দিতে হবে। এছাড়া মন্ত্রণালয়গুলো পরিচালনা করবেন সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তা।
এদিকে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে জানিয়েছে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ৫০% প্রশাসন ক্যাডার থেকে আর বাকি ৫০% অন্যান্য ২৫ ক্যাডার থেকে দেওয়া হবে। যদিও বর্তমানে উপসচিব পদে ৭০% প্রশাসন ক্যাডার থেকে আর বাকি ৩০% অন্যান্য ক্যাডার থেকে দেওয়া হয়। এছাড়া, সংস্কার কমিশন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার বিলুপ্ত করার সুপারিশ করবে বলেও জানিয়েছে। এরপরই বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তা প্রতিবাদ সভা, কলম বিরতি, মানব বন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করেছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টেও অনেকে এসব নিয়ে সমালোচনামুলক লেখালেখি করছেন।
ইতোমধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রাণীসম্পদ, মৎসসহ কয়েকটি ক্যাডারের ৯ জন কর্মকর্তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরুপ মন্তব্য করার অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও কয়েকজনের মন্তব্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
তাদের মন্তব্য 'সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা ২০১৯'- অনুযায়ী পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পর্যালোচনা এসব মন্তব্য নীতিমালা পরিপন্থী হলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।