কালুরঘাট রেলসেতুতে শুরু সংস্কারকাজ, চলবে ফেরিতে যান পারাপার
চট্টগ্রামের ৯২ বছরের পুরনো কালুরঘাট সেতুটি সংস্কার করছে রেলওয়ে। এবার সংস্কারকাজে ৫৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরুর আগে সেতু মজবুত করতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংস্কারকাজ শেষ করতে লাগতে পারে তিন মাস। এই সময়ে ট্রেন ও যান চলাচল বন্ধ থাকবে। যানবাহন পারাপারের জন্য কর্ণফুলী নদীতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে দুটি ফেরি।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'কালুরঘাট রেলসেতুর সংস্কারকাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রয়োজনীয় মালামাল আনার কাজ শুরু করেছে। ৮-১০ দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে। বিষয়টি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। কারণ সংস্কারকাজ শুরু হলে সেতু দিয়ে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, 'সংস্কারকাজ চলা অবস্থায় ফেরি সার্ভিস চালু থাকবে। ইতোমধ্যে দুটি ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ফেরিতে কোন ধরনের যানবাহন থেকে কত টাকা ভাড়া রাখা হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। বিষয়টি জানাতে সেতু মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে টোলের হার নির্ধারণ করার পর ফেরি সার্ভিস চালু হবে।'
রেলওয়ের প্রকৌশলীরা জানান, এর আগে ২০০৪ সালের ১৩ আগস্ট ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুতে বড় ধরনের সংস্কারকাজ করা হয়েছিল। এরপর ২০১২ সালে আরেক দফা সংস্কার করা হয়েছিল। বর্তমানে সেতুর ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনে ট্রেনের ১০ টন ভারী ইঞ্জিন চলাচল করে। এ সময় গতি থাকে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার। কিন্তু কক্সবাজারগামী ট্রেনের ইঞ্জিনের ভর হবে ১২-১৫ টন। ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ৮০-১০০ কিলোমিটার। কালুরঘাট সেতুর বর্তমান অবস্থার কারণে এই গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে না। অন্তত ৪০-৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা আছে। এ জন্য বুয়েটের পরামর্শক দলের পরামর্শ অনুযায়ী সেতু সংস্কার করা হচ্ছে।
দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, 'সেপ্টেম্বরের মধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের চলমান কাজ শেষ করে ট্রেন চলাচল শুরুর চিন্তা করছি আমরা। ১০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৮২ কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ শেষ। প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। রেললাইনের ওপর থাকা ছোট-বড় ব্রিজ-কালভার্টের কাজও শেষ হয়েছে। এখন মেকানিক্যালের কাজ চলমান আছে।'
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রামু পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।
রেলওয়ের তথ্যমতে, ১৯৩১ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করে ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি নামের সেতু নির্মাণকারী একটি প্রতিষ্ঠান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। যদিও পরে দোহাজারী পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয় এই রেললাইন। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল।