২২ জুলাই সমাবেশের অনুমতি চেয়ে সিএমপিকে চিঠি: চট্টগ্রামে বড় শোডাউন দেখাতে চায় জামায়াত
রাজধানী ঢাকার পর সিলেটে বড় ধরনের শোডাউনের পরিকল্পনা ছিল দীর্ঘ সময় পর্দার আড়ালে থাকা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর। সিলেটে সমাবেশের অনুমতি না মিললেও চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে আগামী ২২ জুলাই বড় ধরনের শোডাউনের পরিকল্পনা করছে দলটি। এজন্য চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের পক্ষ আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার (১৫ জুলাই) মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কার্যালয়ে অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।
জামায়াতের আইনজীবী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ নেতৃবৃন্দ ও আলেম ওলামাদের মুক্তি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিরোধ ও দশ দফা দাবিতে আগামী ২২ জুলাই শনিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত লালদীঘি ময়দানে সমাবেশের আয়োজন করতে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কর্মসূচি আমরা সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে চাই।'
বিএনপিসহ আওয়ামী লীগ-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যখন এক দফা দাবিতে আন্দোলনে, তখন একই দাবিতে 'একলা চলো নীতি' অনুসরণ করছে জামায়াত। দীর্ঘ এক দশক পর গত ১০ জুন রাজধানী ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি পায় নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারোনো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলটি। 'যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি' বা 'সরকারের সঙ্গে আঁতাতের' ফলে দীর্ঘ সময় পর জামায়াত প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি পেয়েছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন উঠেছে।
তবে আপাতত এসব কথা কানে না তুলে রাজনৈতিক মাঠে নিজেদের শক্তিমত্তার প্রমাণ, নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার নীতিতে পথ চলছে দলটি। কারণ দীর্ঘদিন যুদ্ধাপরাধের দায়ে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ফাঁসি, ১৯৭১-এর ভূমিকায় সংগঠনকে দোষী সাব্যস্ত করা, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানোর ফলে প্রতিকূল অবস্থায় অনেকটা গোপনে কার্যক্রম চালাতে হয়েছে দলটিকে। ফলে প্রকাশ্যের আসার সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছে জামায়াত।
এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (১৫ জুলাই) সিলেটে সমাবেশ করার তারিখ নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু নাশকতার আশঙ্কায় অনুমতি দেয়নি সিলেট মহানগর পুলিশ। তবে আগামী ২১ জুলাই সমাবেশ করার তারিখ পুনরায় নির্ধারণ করেছে দলটি। তবে চট্টগ্রামের সমাবেশে অনুমতি পাবার বিষয়ে আশাবাদী দলটি।
জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীরা মনে করেন, চট্টগ্রাম জামায়াতের অন্যতম ঘাঁটি। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ২৬২টি আসনের বিপরীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট পায় মাত্র ৩২টি আসন। এরমধ্যে সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী যে দুটি আসন পায়, তার মধ্যে ছিল চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) ও কক্সবাজার-০২ (কুতুবদিয়া ও মহেশখালী)। এজন্য চট্টগ্রামকে আলাদা গুরুত্বের চোখে দেখছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। লালদীঘি ময়দানে অনুমতি না পেলে নগরীর পুরাতন স্টেশনে সমাবেশ করতে চায় দলটি।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের নায়াবে আমীর (সহসভাপতি) আ জ ম ওবায়েদ উল্লাহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা চট্টগ্রাম থেকে একটি ভালো প্রোগ্রাম করতে চাই। রাজনৈতিক ময়দানে চট্টগ্রাম অনেক গুরুত্ব বহন করে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও এখানকার কর্মসূচিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। অনুমতি চাওয়া হয়েছে পুলিশের কাছে। আমরা আশাবাদী যে, অনুমতি পাব। অনুমতি পেলে শুধু চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের পক্ষ থেকে লক্ষাধিক মানুষ জমায়েতের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে।'
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চ) মোহাম্মদ মঞ্জুর মোরশেদ টিবিএসকে বলেন, 'জামায়াতের পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে একটি চিঠি পেয়েছি। যেকোনো সভা-সমাবেশ বা রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি চাওয়া হলে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করা হয়। এরপর তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়। এক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।'
গত মাসে রাজধানীতে সমাবেশের আগে ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশের অনুমতি নিয়ে ঢাকার মতিঝিলে সর্বশেষ বিক্ষোভ মিছিল করেছিল জামায়াত। আর ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি ময়দানে সর্বশেষ 'চট্টগ্রাম ও মোংলাবন্দর ভারতের ব্যবহারের অনুমতি এবং ইসলামী রাজনীতি নিয়ে ষড়যন্ত্রের' প্রতিবাদে বড় ধরনের সমাবেশ করেছিল মহানগর জামায়াতে ইসলামী। এরপর প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে একক কোনো কর্মসূচি পালন করেনি দলটি। তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ও ২০ দলীয় জোটের বিভিন্ন কর্মসূচিতে শোডাউন দিয়েছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা।