ভিডিও কলে বিয়ে, সংসার শুরুর আগেই অগ্নিকাণ্ডে নিহত সৌদি প্রবাসী স্বামী
ফোনে পরিচয়। এরপর পরিবারের সম্মতিতে ভিডিও কলের মাধ্যমে বিয়ে হয় রুবেল হোসেন ও মরিয়ম খাতুনের। রুবেল সৌদি আরব প্রবাসী হওয়ায় সামনাসামনি দেখাশোনার সুযোগ হয়নি তাদের। কথা ছিল, রুবেল দেশে ফিরলে বড় আয়োজন করে বিয়ের অনুষ্ঠান করবেন, কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না দুই পরিবারের। এর আগেই সৌদি আরবের আল-হুফুফ শহরের একটি ফার্নিচার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যু হয় রুবেলের।
রাজশাহীর বাগমারার বারুইপাড়া গ্রামের বাড়িতে নব বধূ মরিয়মের কান্না থামছে না কিছুতেই। সংসার শুরুর আগে রুবেলের চলে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছেন না তিনি। প্রিয়জনকে হারিয়ে তার বুক ফাটা কান্নায় শোকে বিহ্বল দুই পরিবার।
মাত্র নয় মাস ছয় দিন আগে একই ইউনিয়নের ইব্রাহিম নগরের মঞ্জুর রহমানের মেয়ে মরিয়ম খাতুনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় জফির উদ্দিনের ছেলে রুবেল হোসেনের। স্বামী দেশে না থাকায় কখনো বাবার বাড়ি, কখনো শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন মরিয়ম।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে সৌদি আরবের আল-হুফুফ শহরের বাণিজ্যিক এলাকায় একটি ফার্নিচার ওয়ার্কশপে অগ্নিকাণ্ডে ৯ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে রুবেলসহ চারজনের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়।
নিহতদের মধ্যে আরও রয়েছেন বাগমারা উপজেলার ঝিকড়া ইউনিয়নের বারুইপাড়া গ্রামের জমিরের ছেলে মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম, শাহাদাত হোসাইনের ছেলে আরিফ ও যোগীপাড়া ইউনিয়নের বড় মাধাইমুরি কাতিলা গ্রামের আনিসুর রহমান সরদারের ছেলে ফিরুজ আলী সরদার। এদের মধ্যে নিহত রুবেল ও আরিফ সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা।
জানা যায়, ৬-৭ বছর আগে ১৬ কাঠা ফসলি জমি বিক্রি ও নগদ দেড় লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন রুবেল। পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি। তাই বিদেশে তার এমন অকাল মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না রুবেলের পরিবার। বাবা-ভাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের মাতম থামছে না কিছুতেই।
দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ পেতে চান স্বজনরা। শেষবারের মতো হলেও একবার চোখের দেখা দেখতে চান তারা। তাই লাশ আনতে ঊর্ধ্বতন মহলের সহযোগিতা চেয়েছে নিহতদের পরিবার।
এ ব্যাপারে বাগমারা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার সুমন চৌধুরী জানান, সৌদি আরব থেকে ফরম পূরণ করে পাঠানোর পরে লাশ দেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে স্বজনদের।