আওয়ামী লীগের সমর্থনে নতুন জোটে থাকতে পারে বিএনএম ও বিএসপি
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত জোট ও তাদের সমর্থক অন্যান্য জোটের মোকাবিলা করতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বাইরে একাধিক জোট গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
সেই জোটের শরীক দল হিসেবে থাকতে পারে সাম্প্রতিক নিবন্ধনের জন্য চূড়ান্ত হওয়া আলোচিত দুই রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ভিত্তিক একটি জোট এবং সরকারের কর্মকান্ডে সমর্থন করা ইসলামী দলগুলো নিয়ে আরেকটি পৃথক 'ইসলামী জোট' হতে পারে বলে জানা গেছে।
গত ১৯ জুলাই রাতে মহাজোটের শরীক ১৪ দলের নেতাদের সাথে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে নতুন জোট গঠনের উদ্যোগ নিতে এবং দলগুলোর সাথে কথা বলে দ্রুত একটি প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বৃহস্পতিবার বিকেলে টিবিএসকে বলেন, এই জোট গঠনের জন্য খুব দ্রুত কার্যক্রম শুরু করা হবে। সেটি সামনের সপ্তাহ থেকেই শুরু হরা হবে। জোটের সম্ভাব্য শরিকদের নামের তালিকা প্রনয়ণের কাজ চলছে এখন।
১৯ জুলাইয়ের বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট এবং বিএনপির আদর্শিক জোটের বাইরে যেসব দল রয়েছে, কিন্তু তারা মুক্তিযদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে তাদেরকে নিয়ে এই জোট হবে। এছাড়াও যেসব ইসলামী দল কোনো জোটেই নেই, কিন্তু বর্তমান সরকারের কর্মকান্ড সমর্থন করে তাদেরকে নিয়ে একটি ইসলামী জোট গঠন হতে পারে।
বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক নেতা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপি-জামায়াত জোট ও তাদের সমর্থক জোটের কের্মসূচী মোকাবিলা করতে ১৪ দল সম্প্রসারণে আরো দু-একটি দলকে যুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা তোলেন জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। তবে একাধিক শরিক দলের নেতা এটার বিরোধিতা করেন। তখন যারা সরকারের পক্ষে আছে কিন্তু নীতিগত বা আদর্শিক কারণে জোটে নেওয়া যাচ্ছে না, তাদের পৃথক জোট গঠন করে ভূমিকা রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।
বৈঠকে অংশ নেয়া মহাজোটের শরিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, এখন ১৪ দলের নীতির সাথে অনেক দলের নীতর মিল নেই। আবার অনেক ইসলামী দল রয়েছে যারা সরকারকে সমর্থন করে কিন্তু তাদের নীতির সাথে ১৪ দলের পলিসির পার্থক্য রয়েছে। এসব দলকে নিয়ে একাধিক জোট গঠন হতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ১৪ দলের নেতাদের বৈঠকে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন যেমন বিএনপি জামায়াত জোট রয়েছে, সেইরকম জোট হলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট। আবার বিএনপির সমর্থনে গণতন্ত্র মঞ্চ এবং ১২ দল নামে জোট রয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের জন্য ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদীর সাথে আলোচনা করবেন জোট গঠনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী টিবিএসকে বলেন, "আমরা সুন্নি মতাদর্শের দলগুলো সরকারের কর্মকান্ডকে সমর্থন করি। কিন্তু পলিসির অমিল থাকায় আমরা ১৪ দলে যাইনি। যদি নতুন কোনো জোট করার আহ্বান জানানো হয় তাহলে সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাস করা যেসব রাজনৈতিক দল এখনো কোনো জোটে নেই তাদের নিয়ে জোট করা হবে এবং রাজপথে বিএনপি-জামায়াতের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে মোকাবিলা করা হবে।"
তিনি বলেন, "আমাদের দল ছাড়াও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টসহ আরো ১০টি সুন্নি মতাদর্শে রাজনৈতিক দল রয়েছে, তাদেরকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থনে নতুন 'ইসলামী জোট' গঠন করা হবে।"
আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর শাহ বলেন, "শুনেছি আমাদেরকে নিয়ে জোট করা হবে। আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেলেই এ নিয়ে কাজ শুরু করবো।"
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য চূড়ান্ত হওয়া বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ আল হাসানী টিবিএসকে বলেন, "এখন পর্যন্ত দেশের ২২০ আসনে একতারা প্রতীকে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জোট গঠনের প্রস্তাব আসলে সেটি আমাদের উচ্চতর কমিটির সাথে আলাপ করে বিবেচনা করা হবে।"
আর মুক্তিযদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এরকম তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) সহ আরো ১০-১২টি রাজনৈতিক দল থাকতে পারে এই জোটে।