তরীকত ও সুপ্রিম: প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চাচা আর ভাতিজা
বিএনপির ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের (বিটিএফ)।
নির্বাচনে মাত্র তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল দলটি। তবে আওয়ামী লীগের ওয়াকওভারের বেশ সুবিধা পায় দলটি। তিনটির মধ্যে দুটি আসনে দলটি জয়লাভ করেছিল। নির্বাচনে দলটি মোট ভোট পেয়েছিল এক লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি।
দলের প্রধান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী চট্টগ্রাম-২ আসনে এবং দলটির তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী লক্ষ্মীপুর-১ আসনে জয়লাভ করেন।
এবারেও বিএনপির (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ) নির্বাচন বয়কটের ঘোষণায় তরীকতের মনোবল যেন আরো চাঙা হয়েছে। দলটি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেকর্ড ১২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছিল।
পরে অবশ্য দলটি মাত্র ৪৭ জন প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল করেছে, যা দলটির ঘোষণা করা সংখ্যার অর্ধেকেরও কম। তারপরেও ৪৭ জন প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল দলটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
২০০৮ সালে দলটি ৩১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। তবে একটি আসনেও জয় পায়নি। সবগুলো আসন মিলে দলটির প্রার্থীরা মোট ১৯ হাজার ৯০৫টি ভোট পেয়েছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি ১৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। দলটির প্রধান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম-২ আসনে জয়লাভ করেন।
মজার বিষয় হলো- দলটির 'মালা' প্রতীকটি সেই সময়েও 'নৌকা' প্রতীকে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল।
নির্বাচনে সবমিলিয়ে দলটির প্রার্থীরা প্রায় দুই লাখ ৪০ হাজার ভোট পেয়েছিল। বেশিরভাগ ভোটই পড়েছিল মাইজভাণ্ডারীর পক্ষে। অন্য ১৬টি আসনে প্রার্থীদের লাভ করা ভোটের সংখ্যা ছিল মাত্র ছয় হাজার।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, নৌকা ছাড়া মালা ভাসতে পারবে না।
সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ১৯৯১ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে তিনি দল পরিবর্তন করে যোগ দেন বিএনপিতে। সেবার বিএনপির টিকিট নিয়ে নির্বাচন করে হেরে যান তিনি।
২০০৫ সালে তিনি বিটিএফ গঠন করে জামায়াতে ইসলামীর সংস্পর্শে আসেন এবং বিএনপি ত্যাগ করেন।
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মুহম্মদ আলী হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা জোটগতভাবে নির্বাচন করছি। জোট ১৩টি আসন চেয়েছে। জোটের বাইরেও দল প্রার্থী নির্বাচন করবে। যদি কিছুটা সময় পাওয়া যেত, তাহলে আমরা ২০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারতাম।'
এদিকে বিটিএফের চেয়েও সম্ভবত বেশি উদ্যোমী নবগঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। যদিও এটি দলের প্রথম নির্বাচন। দলটি মোট ৮২ জন প্রার্থীকে মনোনীত করেছে। যেখানে বিটিএফ তিনবার নির্বাচনে অংশ নিয়েও এত সংখ্যক প্রার্থী মনোনীত করতে পারেনি।
বিএসপির নেতৃত্বে আছেন সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারী। তিনি বিটিএফ প্রধান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর ভাতিজা। সাইফুদ্দিন তাঁর চাচার আসনে (চট্টগ্রাম-২) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পারিবারিক বন্ধন সত্ত্বেও এক ইঞ্চি ছাড় দেবেন না।
নয় দলীয় লিবারেল ইসলামিক অ্যালায়েন্সের নেতৃস্থানীয় বিএসপি 'একতারা' প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এটি জোটের একমাত্র দল যার নিবন্ধন রয়েছে।
ইসলামী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত দলটি সব ধর্ম-বর্ণের প্রতি সমতা নিশ্চিতের বিষয়টি তুলে ধরেছে।
গত নভেম্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএসপি প্রধান বলেছিলেন, তারা সব সম্প্রদায়, শ্রেণি ও ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
তিনি বলেন, 'গাজীপুরে তৃতীয় লিঙ্গের একজনকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।' তিনি আরো বলেন, 'আমাদের ৩০ জন হেভিওয়েট প্রার্থী আছে যারা নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জয়ী হবে।'
গত ২৪ নভেম্বর গণভবনে জোটের ৯টি ইসলামী দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পরে সাইফুদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রী তাদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তবে পরিস্থিতি আশানুরূপ না হলে প্রার্থীতা প্রত্যহার করোর কথাও জানিয়েছেন তিনি।