বিএনপির তারুণ্য সমাবেশকে কেন্দ্র করে আমিনবাজারে চেকপোস্ট, দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি
রাজধানীতে বিএনপির তারুণ্য সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার প্রবেশমুখ আমিনবাজারে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশী কার্যক্রম পরিচালনা করছে পুলিশ।
সকাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতালের সামনে ঢাকামুখী লেনে ব্যারিকেড বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে তল্লাশী করায় মহাসড়কের আমিনবাজার থেকে বলিয়ারপুর পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এতে ভোগান্তিতে পড়েছে অফিসগামীসহ হাজারো সাধারণ মানুষ।
মো. জসিম নামে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের একজন টেকনোলজিস্ট দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, "ভোর ৬টা বাজে ধমরাইয়ের কালামপুর থেকে বাসে উঠেছি। বলিয়ারপুর থেকে সালেহপুর পর্যন্ত এক ঘণ্টা জ্যামে আটকে ছিলাম, পরে পায়ে হেঁটে সামনে এগোনোর চেষ্টা করছি।"
তিনি বলেন, "এগুলো আমার কাছে অহেতুক হয়রানি মনে হয়। বৃথাই আমাদের, সাধারণ মানুষদের কষ্ট দেওয়া। কর্তৃপক্ষ তো বুঝবে না কেন দেরি হলো অফিসে যেতে, কৈফিয়ত চাইবে। কারণ দেখালেও মানবে কিনা নিশ্চয়তা কি?"
মানিকগঞ্জের বরঙ্গাইল থেকে রাজধানীর মিরপুরে অফিসের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন ইব্রাহিম নামে এক ব্যক্তি। টিবিএসকে তিনি বলেন, "বাড়ি থেকে রওনা হয়েছি মিরপুর যাবো অফিসে। সালেহপুর এসে এক ঘণ্টা জ্যামে আটকে থেকে এখন হেঁটে যাচ্ছি। অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।"
এদিকে, তল্লাশীর মুখে পড়া একাধিক ব্যক্তি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, তল্লাশী ও জিজ্ঞাসাবাদের সময় মূলত তারা বিএনপির তারুণ্য সমাবেশে যাচ্ছেন কিনা সেটি জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
এ সময় রাস্তায় অনেককে থামিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশী করতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের। যাদের থামানো হচ্ছে, তাদের গন্তব্য কোথায় ও তারা কোথা থেকে আসছেন, সেটি জানতে চাওয়া হচ্ছে।
তল্লাশীর মুখে পড়া সাইফুল ইসলাম নামে এক পরিবহন শ্রমিক টিবিএসকে বলেন, "পুলিশ শুধু শুধু আমাকে থামিয়ে আমার সময় নষ্ট করলো। আমাকে বলছে (পুলিশ), তুমি বিএনপির সমাবেশে যাবা? আমি না বলার পরেও তারা আমার কথা বিশ্বাস করতে চায় না।"
"আমাকে অনেকক্ষণ আটকে রাখে। পুলিশ বলে, তুমি যার কাছে যাবা ফোন দাও। এভাবে আমাকে হয়রানি করার মানে কী? আমি তো আমার কর্মস্থলে যাচ্ছি," যোগ করেন তিনি।
ধামরাই কলেজের শিক্ষার্থী সাগর বলেন, "আমাকে থামিয়ে পুলিশ জানতে চাচ্ছে কোথায় যাচ্ছি। বললাম, ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় যাচ্ছি। তার বিশ্বাস করতে চাইলো না, জানতে চাচ্ছে বিএনপির সমাবেশে যাচ্ছি কিনা।"
সকালে আমিনবাজার চেকপোস্ট ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে রাস্তার মাঝে ব্যারিকেড বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহন তল্লাশী করছে জেলা পুলিশের সদস্যরা। বিশেষ করে কোন হাইয়েস মাইক্রোবাস দেখলে থামিয়ে ভিতরে থাকা যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়াও এসময় বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র চেক করতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের।
জুয়েল নামে এক ব্যক্তি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, "সকালে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলাম। এত সকালে বের হয়েও এই জ্যাম। বলিয়ারপুর থেকে বাসে উঠে আবার নেমে গিয়েছি। একজন অসুস্থ মানুষকে নিয়ে এভাবে কি রাস্তায় বসে থাকা যায়?"
যোগাযোগ করলে সাভার মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা টিবিএস'কে বলেন, "ঢাকায় প্রবেশ করে কেউ যেন কোন নাশকতামুলক কর্মকাণ্ড করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চেকপোস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ট্রাফিক বিভাগের নিয়মিত যেই কার্যক্রম, বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র চেক করা, সেটি করা হচ্ছে।"
এসময় চেকপোস্টের কারণে সৃষ্ট যানজটে মানুষের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, "জ্যাম তো না, আসলে চেকপোস্টের কারণে গাড়ি একটু ধীরগতিতে চলছে। কোনো গাড়ি থেমে নেই, চলমান আছে।"
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আবদুল্লাহ হিল কাফী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "যেহেতু একটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশ আছে, তাই কেউ যেন রাজধানীতে প্রবেশ করে কোন নাশকতা করতে না পারে সেই লক্ষ্যে আমাদের এই চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।"
চেকপোস্টের কারণে যানজট ও ভোগান্তি প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, "তেমন জ্যাম কিন্তু না, একটু ধীরগতি। যানবাহন কিন্তু থেমে নেই, চলছে। তাছাড়া এখানে স্বাভাবিক সময়েও এইটুকু গাড়ির চাপ থাকে।"
অন্যদিকে, সকাল থেকে ৩০ এর অধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর চেকপোস্ট সংলগ্ন আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতালের অভ্যন্তরে বসিয়ে রাখতে দেখা গেছে।
যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চেকপোস্ট থেকে কাউকে আটক করা হয়নি।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আবদুল্লাহ হিল কাফি টিবিএসকে বলেন, "আটকের কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। কেউ রাজধানীতে প্রবেশ করে যেন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে না পারে সেই লক্ষে চেকপোস্ট কার্যক্রম চলছে।"