ছাড়া পেলেন টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রেপ্তার বুয়েটের ২৪ জনসহ ৩২ শিক্ষার্থী
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রেপ্তার বুয়েটের ২৪ জনসহ ৩২ শিক্ষার্থী কারাগার থেকে বের হয়েছেন।
বুধবার (২ আগস্ট) রাত পৌনে ১০টায় সুনামগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে শিক্ষার্থীরা বের হন।
শিক্ষার্থীদের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু হানিফ নোমান কারামুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কারাগার থেকে বের হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের মা-বাবা ও স্বজনেরা তাদেরকে গাড়িতে ওঠান। এ সময় কারও সঙ্গে কোনো কথা বলেননি শিক্ষার্থীরা।
অবিভাবকদের দাবি, তাদের সন্তানেরা নির্দোষ এবং তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। তবে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. এহসান শাহ্।
এর আগে এ দিন দুপুরে পুলিশ আটক শিক্ষার্থীদেরকে তাহিরপুর চীফ জুডিশিয়াল আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করে। বিচারক মোহাম্মদ ফারহান সাদিকের আদালত তা মঞ্জুর না করে শিক্ষার্থীদের জামিনের আদেশ দেন।
আদালত থেকে জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পাঠানোর পর সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে রাতে শিক্ষার্থীরা কারাগার থেকে মুক্তি পান।
পুলিশ সুপার মো. এহসান শাহ্ বলেন, শিক্ষার্থীরা ইসলামী ছাত্র শিবির কর্তৃক অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ মনে করছে।
'আটক শিক্ষার্থীরা সরকারবিরোধী নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলবে। পরে আমরা প্রতিবেদন জমা দেব,' বলেন তিনি।
উল্লেখ, গত রোববার (৩০ জুলাই) টাঙ্গুয়ার হাওরে একটি পর্যটকবাহী নৌকা থেকে এ শিক্ষার্থীদেরকে আটক করে তাহিরপুর থানা পুলিশ।
আটকের ২৪ ঘণ্টা পর সোমবার বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটানো, জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে গোপন ষড়যন্ত্র ও ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অপরাধে তাহিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদুল কবির বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের পক্ষে আইনজীবীদের একজন অ্যাডভোকেট আবদুল হক টিবিএসকে বলেন, 'দুই নাবালকের মধ্যে একজন বুয়েটের এক ছাত্রের ভাই। অন্য একজনকে নিয়ে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন ছাত্র যিনি ওই নাবালকের গৃহশিক্ষক।'
সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল বলেন, পুলিশ তাদের সন্দেহের কোনো কারণ জানাতে পারেনি।
'তারা গ্রেপ্তারের কোনো কারণ জানাতে পারেনি। ছাত্রদের রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যুক্তি দিতে পারেনি। তাই, শিক্ষার্থীরা জামিন পেয়েছে। সাধারণত এ ধরনের মামলায় তা হয় না।'
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের দলটি কেবল ছুটি কাটাতে সেখানে গিয়েছিল।
'টাঙ্গুয়ার হাওর একটি পর্যটন স্পট। এখানে হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে আসে। মানুষ নিয়মিত দলবেঁধে আসে। এখানে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কোনো সুযোগ ছিল না।'
দলটি থেকে জব্দ করা কথিত লিফলেট সম্পর্কে বলতে গিয়ে অ্যাডভোকেট আবদুল বলেন, গ্রুপের কয়েকজন ছাত্র নামাজের মতো নিয়মিত ধর্মীয় কর্তব্য বিষয়ক হাদিস এবং ইসলামিক আইনের বই ডাউনলোড করেছে।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, 'পুলিশের দাবি অনুযায়ী তাদের কাছে কোনো বই ছিল না। কিছু শিক্ষার্থী গুগল থেকে হাদিস ও ইসলামিক আইন সম্বলিত ইসলামিক বই ডাউনলোড করেছিল।'
তিনি আরও বলেন, এই দলটি কোনো 'সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের' জন্য কোনো দ্বীপের দিকে যাচ্ছিল না।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থীসহ ৩২ শিক্ষার্থীকে জামিন দেওয়ার বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে পুলিশের কোনো মন্তব্য নেই।
তিনি বলেন, 'আদালতের সিদ্ধান্ত যা-ই হোক না কেন আমরা সেটাকে সম্মান করি।'