১.২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে ১১.৬ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ুর ক্ষতি এড়ানো যাবে: গবেষণা
১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশে ২০৩০ সালের মধ্যে ১.২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন। এই বিনিয়োগ করলে ১১.৬ বিলিয়ন ডলারের সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে 'ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন: অপরচুনিটিজ ফর বাংলাদেশ ইন ডেভেলপমেন্ট অব অ্যাগ্রো-বেজড ইন্ডাস্ট্রিজ' শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি), জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং বিটপী দাশ চৌধুরী।
গবেষণায় বলা হয়, বিশ্বব্যাপী ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনায় থাকা ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নাইজেরিয়া, বাংলাদেশ সহ মোট ১০টি দেশে বিনিয়োগ প্রয়োজন ৩০.৪ বিলিয়ন ডলার। এর ফলে দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ৩৭৬.৬ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে কৃষিতে। এজন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-এর গবেষণায় ১০ দেশে যে ৩০.৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে তার মধ্যে ১৩ বিলিয়ন ডলারই কৃষি খাতে ব্যয়ের সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এছাড়া শিল্পখাতে ১১.৭ বিলিয়ন ডলার এবং সেবাখাতে ৫.৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা বলা হয়।
গোলটেবিল আলোচনায় প্যানেলিস্টরা বলেন, ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে পলিসি গঠন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তন হোক বা না হোক দেশের কৃষি সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। নানা প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করেই ফসল ফলাতে হয়। ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করতে হলে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে, উৎপাদন ব্যয় কমাতে হবে এবং প্রতিকূল পরিবেশে চাষোপযোগী ফসলের জাত উদ্ভাবন করতে হবে।"
তিনি বলেন, "সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার প্রভাব বেড়ে যাওয়ার কারণে একটা বড় অঞ্চলে আমরা চাষাবাদ করতে পারি না। এখানে চাষাবাদের উপযোগী প্রযুক্তি উন্নয়নে কৃষি বিজ্ঞানীদের কাজ করতে হবে।"
এদিকে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে কৃষি খাতের পাশাপাশি অর্থনীতিকে সমুজ্জ্বল রাখতে টেকসই কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প সম্প্রসারণের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, "মাত্র ০.৪% বৈশ্বিক গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য বাংলাদেশ দায়ী, যা অন্যান্য বৃহৎ শিল্প অর্থনীতির দেশের তুলনায় নগণ্য; অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে বলা যায়, দ্রুত পরিবর্তনশীল জলবায়ু এ দেশের ১% থেকে প্রায় ২% বার্ষিক জিডিপি ক্ষয়ের কারণ হবে।"
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সবাইকে একত্রে এগিয়ে এসে 'নেট জিরো ট্রানজিশন প্ল্যান' গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এসিআই'র অ্যাগ্রি-বিজনেস ডিভিশনের সভাপতি ড. এফএইচ আনসারি বলেন, "উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবে ফসলের ফলন কমে যাবে, মাছ ও চিংড়ির ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হবে; এছাড়াও দিনরাতের তাপমাত্রার পরিবর্তন চালের উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে, পোল্ট্রি সেক্টরে মৃত্যুহার বেড়ে যেতে পারে।"
তিনি আরও বলেন, তাপমাত্রা পরিবর্তনের সামগ্রিক প্রভাব উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে খাদ্যঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে; খাদ্যের দাম বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের তাই উচিত সরকারি ও বেসরকারি- উভয় ক্ষেত্রেই গবেষণা অর্থায়ন করা।
আইসিসিবির সহ-সভাপতি একে আজাদ বলেন, "প্রতিনিয়তই আমাদের ওয়াটার লেভেল নিচে নেমে যাচ্ছে। ভারতের ফ্যাক্টরিগুলো কোন পানিই কারখানার বাইরে আনে না, সেখানে রিসাইক্লিং করা হয়। কিন্তু আমরা সেটা এখনো পুরোপুরি পারছি না। আমাদেরকে দ্রুত এটা করতে হবে, কারণ সামনের দিনগুলোতে পানির একটা বড় সংকটের সম্ভাবনা রয়েছে।"