কক্সবাজারে নেমে যাচ্ছে বন্যার পানি, ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন
কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। বুধবার ভোরে হালকা বৃষ্টি হলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল না। এ পরিস্থিতিতে নামতে শুরু করেছে বন্যাকবলিত এলাকার পানি। এখন পর্যন্ত বন্ধ আছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সরাসরি যান চলাচল। তবে আনোয়ারা-বাঁশখালী-পেকুয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে যান চলাচল করছে।
পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। কোথাও মহাসড়ক, সড়ক, কাঁচা রাস্তা, আবার কোথাও কালভার্ট, ভেঙ্গে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। বীজতলা, ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, বেড়িবাঁধ, ঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যেন লন্ডভন্ড হওয়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
পানি নামতে শুরু করলেও ঘরে ফিরে নতুন শংকায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষেরা। তাদের রান্নার পরিবেশ নেই; তীব্র সংকট বিশুদ্ধ পানিরও।
বুধবার সকালে চকরিয়া উপজেলার পানিতে ডুবে থাকা কিছু সড়কে বোঝা যায় ভাঙনের তীব্রতা। কাকড়া-মিনাবাজার সড়কটির ৩ কিলোমিটার এলাকায় কমপক্ষে ৫০টি ভাঙন সড়কটিকে চলাচল অনুপযোগী করে দিয়েছে।
স্থানীয় রহিম উদ্দিন জানিয়েছেন, চারদিন কমপক্ষে ৪-৫ ফুট পানিতে বন্দী ছিলেন তারা। পানি ক্রমাগত নেমে যাচ্ছে। সাথে সড়কের ভাঙন, বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি, ফসলী জমি ও মাছের ঘেরের ক্ষয়ক্ষতি দেখা যাচ্ছে। যাদের বাড়িঘর এখনও রয়েছে তাদেরও বাড়িতে গিয়ে রান্না করার সুযোগ নেই, বাড়ির ভেতরের পানি বের করার চেষ্টা করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, জিদ্দাবাজার-কাকারা-মানিকপুর সড়কের কয়েকটি অংশে ভাঙন রয়েছে। মাতামুহুরী নদীর নিকটবর্তী গ্রামের বসতঘরগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে নানাভাবে। চকরিয়া ও পেকুয়ায় বেশ কয়েকটি বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে লোকালয়ে মিশে আছে পানি। চকরিয়ার পৌর শহরের শপিং কমপ্লেক্স, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পানি বের করার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের কোটি টাকার ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে।
চকরিয়ার লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, ফাঁসিয়াখালী, বদরখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী এবং পেকুয়া উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, উজানটিয়া, মগনামা, রাজাখালী, টৈটং, শিলখালী, বারবাকিয়া ইউনিয়নের পরিস্থিতিও একই।
এছাড়াও মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া ও রামুতে নানা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, প্রাথমিক যে তথ্য হাতে এসেছে তাতে ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি টাকার বেশি। এটা অনেক বেশি হতে পারে।
এ পর্যন্ত যে তথ্য মিলেছে, তাতে বন্যা কবলিত এলাকার মধ্যে চকরিয়া-বদরখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের ৬ কিলোমিটার, ইয়াংগা-মানিকপুর- শান্তিবাজার সড়কের ১১ কিলোমিটার, লক্ষ্যারচর- বেথুয়াবাজার- বাগগুজারা সড়কের ১১ কিলোমিটার, একতাবাজার-বনৌজা শেখ হাসিনা সড়কের আধা কিলোমিটার, বরইতলী-মগনামা সড়কের ৭ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের আড়াই কিলোমিটার, ৩ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা, ৩টি কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়েছে।