নগর পরিবহনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অবৈধ বাস চলাচল
রাজধানী ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে চালু হওয়া নগর পরিবহন বাস সার্ভিসের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অবৈধ বাস চলাচল। নগর পরিবহন চলাচলকারী রুটগুলোতে বিপুল সংখ্যক পারমিটবিহীন বাসের কারণে লক্ষ্যচ্যুত হচ্ছে এই পরিকল্পনা।
রুট রেশনালাইজেশন ফ্র্যাঞ্চাইজির অধীনে রুট-২১ এর প্রাইভেট অপারেটর ট্রানসিলভা পরিবহন। সম্প্রতি, নির্ধারিত এই রুটে পারমিটবিহীন বাস চলাচলের কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়ে কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে এই পরিবহন অপারেটর।
এছাড়া, রুট-২২ এর হানিফ পরিবহনও (ঘাটারচর থেকে ডেমরা) একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
হতাশা প্রকাশ করে কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, তারা এই উদ্যোগের সম্ভাবনায় বিশ্বাস রেখে পরিষেবা দিতে এসেছিলেন ।
"তবে কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে তা ব্যর্থ হয়েছে। যদি এমনটিই চলতে থাকে, তাহলে আমাদের পরিষেবা বন্ধ করতে হবে; এছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই, " যোগ করেন তিনি।
রুহুল আমিন বলেন, "প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল যে, নির্ধারিত রুটে এই পরিষেবা চালু হওয়ার পর অন্য বাস চলাচলের জন্য রুট পারমিট দেওয়া হবে না। কিন্তু এটি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।"
"অননুমোদিত বাসের কারণে নগর পরিবহনের আয় কমছে। এছাড়া এসব বাসের কারণে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে, যা যানজট সৃষ্টি করছে। ফলস্বরূপ রুট রেশনালাইজেশন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না," বলেন তিনি।
এই ব্যবস্থা বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত ঢাকা ট্রান্সপোর্টেশন কোঅর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভিন জানান, বর্তমানে রুট-২২-এ ১০০টির বেশি অননুমোদিত বাস চলাচল করছে।
কারণ ব্যাখ্যা না করেই সাবিহা পারভিন বলেন, রাস্তা থেকে অবৈধ বাস অপসারণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
অপারেটর, পরিবহন মালিক এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, "আমরা সমস্যাটি মোকাবেলায় আন্তরিকভাব চেষ্টা চালাচ্ছি।"
"যেকোনো মূল্যে এটি (রুট রেশনালাইজেশন) বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সবাইকে এক হতে হবে। আমরা এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের সাধ্যের মধ্যে সবকিছু করতে প্রস্তুত," যোগ করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিটিসিএ'র একাধিক কর্মকর্তা জানান, ট্রাফিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহযোগিতার অভাবের রাস্তা থেকে অননুমোদিত বাস অপসারণ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যদিও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোঃ ফারুক হোসেন বলেছেন, শুধু পুলিশকে দোষারোপ করে কোনো সমাধান হবে না।
তিনি বলেন, "অবৈধ বাস অপারেটর এবং যারা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে তাদেরকে অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে; বাস মালিক ও শ্রমিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।"
"আমরা ধারাবাহিকভাবে অভিযান পরিচালনা এবং অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আমরা এই বিষয়টিকে এখন আরও বেশি গুরুত্ব দেব, যেহেতু বিষয়টি আপনি আমাদের জানালেন," যোগ করেন তিনি।
অন্যদিকে, রেশনালাইজড রুটে বর্তমানে চলাচলকারী বাসগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবহন নেতারা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বলেন, মালিকরা ইতোমধ্যেই সেখানে বিনিয়োগ করেছেন।
তিনি বলেন, "কর্তৃপক্ষের উচিত ওই বাসগুলোকে সংস্কার করে নগর পরিবহনের অধীনে চলাচলের অনুমতি দেওয়া।"
রুট রেশনালিইজেশনের উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি এটি বাস্তবায়নের জন্য সরকারি ভর্তুকি, ভাড়া বৃদ্ধির আহ্বান জানান। এতে করে পরিবহন মালিকরা, যারা ইতোমধ্যেই এই খাতে বিনিয়োগ করেছেন, তারা লাভবান হবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।