ভবনের উচ্চতায় তিন বছরের জন্য ছাড় দিয়ে ড্যাপ সংশোধন, নগর পরিকল্পনাবিদদের উদ্বেগ
আগামী তিন বছরের জন্য ঢাকায় আবাসন প্রকল্পে ভবন নির্মাণের জন্য উচ্চতার ক্ষেত্রে নির্ধারিত ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) ছাড় দিয়ে রাজধানীর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ ২০১৬-৩৫) সংশোধন করেছে সরকার।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তারিক হাসান স্বাক্ষরিত গত রবিবার প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়। এছাড়া প্রজ্ঞাপন হওয়ার আগে জমির মালিক ও ডেভেলপারদের মধ্যে রেজিস্টার্ড চুক্তি হয়ে থাকলে আগের ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী ভবনের পরিকল্পনা অনুমোদনের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
এ সংশোধনে ব্লকভিত্তিক ডেভেলপমেন্ট এরিয়ার জন্য নির্ধারিত ওপেন স্পেস (মাঠ, পার্ক, উদ্যান) ঐ ব্লকের বাসিন্দাদের জন্য ৫০% এলাকা সংরক্ষিত রাখতে পারবে বলেও অনুমোদন দেওয়া হয়।
তবে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহলের চাপে ড্যাপ সংশোধন ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতাকে আরও সংকটে ফেলবে। তাদের দাবি প্রভাবশালী হাউজিং ও ডেভেলপারদের দাবির মুখে ঢাকার বাসযোগ্যতায় এমন ছাড় দেয়া হয়েছে।
সোমবার ড্যাপের এ সংশোধনে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। তারা সাথে সাথে ড্যাপ সংশোধন সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপন বাতিলের জন্যও দাবি জানায়।
আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, শহরের বাসযোগ্যতাকে ছাড় দিয়ে আবাসন প্রকল্পে ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) ছাড় দিয়ে ড্যাপ সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। পরিকল্পনাবিদদের মতামতকে উপেক্ষা করে এবং ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত ওয়ার্কিং কমিটির সাথে আলোচনা ছাড়াই আবাসন ব্যবসায়ীসহ কতিপয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহল ও পেশাজীবির চাপে ড্যাপের এই সংশোধন বাসযোগ্য নগর গড়বার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সরকারের অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
এতে আরও বলা হয়, এই সংশোধনীটি এমন সময়ে চূড়ান্ত করা হল, যখন অল্প কয়েকদিন আগেই কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিপাতে ঢাকা শহরে স্মরণাতীতকালের মধ্যে ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় ঢাকার বাসযোগ্যতার সংকটের বিষয়টি আবারও সাধারণ জনগণের নিকট উন্মোচিত হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান সময়েই যানজট, বায়ু দূষণ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা, জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়- প্রভৃতি কারণে ঢাকা মহানগরীর বাসযোগ্যতা একেবারে তলানিতে অবস্থান করছে।
সংশোধিত ড্যাপে ৭টি অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়ছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেসব এলাকায় এফএআরের মান ১.৫ এর নিচে সেসব এলাকায় ন্যূনতম ১.৫ এফএআর বিবেচনা করতে হবে। প্লটসংলগ্ন বিদ্যমান রাস্তা ৪.৮ মিটার হলে নতুন ড্যাপে এফএআরের মান ২.০।
এতে আরও বলাহয়, বিচ্ছিন্নভাবে ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এলাকা যেমন: বাড্ডা, ডেমরা, খিলক্ষেত, উত্তরখান, দক্ষিণখান, রায়েরবাজার, সাভার, কেরানীগঞ্জসহ অনু্রূপ এলাকার ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির সামনে ৩.৬৬ মিটার প্রশস্ত রাস্তা থাকলে সেখানে এফএআর বাড়িয়ে ২.০ এ উন্নীত করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নতুন ড্যাপ গেজেটের আগে জমির মালিক ও ডেভেলপারদের মধ্যে রেজিস্টার্ড চুক্তি হয়ে থাকলে আগের ড্যাপ ও ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী এফএআর প্রযোজ্য হবে। ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ০.২৫ এফএআর বাড়ানো হয়েছে সংশোধিত ড্যাপে। এক্ষেত্রে উন্মুক্ত স্থান, পার্ক ও খেলার মাঠ সংরক্ষণেরও শর্ত রয়েছে।
আইপিডির পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ড্যাপ সংশোধন এর পূর্বেই এলাকাভিত্তিক ও ব্লকভিত্তিক যে এফএআর ছিল, পরিকল্পনার বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী তা এমনিতেই অধিক ছিল। ঢাকাকে বাঁচাতে উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের কোন বিকল্প নেই। তাই পরিকল্পনা দলিল হিসেবে ড্যাপকে প্রকৃত অর্থে কার্যকর করতে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোন মহলের চাপের বিপরীতে রাজউক ও সরকারের অনমনীয় দৃঢ়তার কোন বিকল্প ছিল না।
তিনি আরও বলেন, এখন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ২০১০ সালে প্রণীত ড্যাপের ভাগ্যই বরণ করতে যাচ্ছে এবারের ড্যাপ - স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শক্তিশালী মহলের কারণে যা ছিল অনেকটাই অকার্যকর। ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট যে কোন সংশোধন ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপের সাথে যথাযথ আলোচনাপূর্বক গ্রহণ করা উচিত।