৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়
এবার পর্যটন মৌসুম শুরুর পর থেকে দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে সুন্দরবন। ভরা মৌসুমে সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হচ্ছেন বিদেশি পর্যটকরা।
টানা ৩ মাস বন্ধ থাকার পর গত ১ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে বনজীবী ও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে সুন্দরবন।
সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে এখন পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। আগত পর্যটকদের মধ্যে বড় একটি অংশ বিদেশি।
সুন্দরী ইকো রিসোর্টের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, "বাংলাদেশের আতিথেয়তা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরাই আমাদের স্বপ্ন। ঢাংমারি গ্রামে গড়ে উঠেছে কিছু ইকো রিসোর্ট, যাদের মাধ্যমে এই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা এখানে ভিলেজ ট্যুরিজমকে ডেভেলপমেন্ট ও কমিউনিটি বেইজ ট্যুরিজম প্রসারে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা শতাধিক স্থানীয় লোকের কর্মসংস্থান করেছি, পাশাপাশি স্থানীয় অংশীজনরাও লাভবান হচ্ছে। সর্বোপরি এখানে আর্থিকভাবে স্থানীয়রা সরাসরি লাভবান হচ্ছেন।"
তিনি বলেন, "গত দেড় মাসে জার্মান, চীন, জাপান, পোল্যান্ড, ভারত মিলে আমরা ৩৪ জন বিদেশি পর্যটকে সেবা দিয়েছি। গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তাদের কাছে তুলে ধরতে সকল আয়োজন করে থাকে টিম সুন্দরী।"
সাইফুল ইসলাম বলেন, এ সময় গ্রামের রাস্তায় দেশীয় পোশাকে হাঁটতে দেখা যান ভিনদেশিদের। গ্রামের লোকজনও তাদের গ্রামবাংলার আতিথেয়তা দিয়ে বরণ করে নেয়।
হলিডেজ ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসের পরিচালক আবু ফয়সাল মোহাম্মদ সায়েম বাবু বলেন, "দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে সুন্দরবন বেশ আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠছে। আর সেইদিক মাথায় নিয়ে আমরা আধুনিক ও বিলাসবহুল ক্রুজ জাহাজের মাধ্যমে পর্যটকদের উন্নতমানের পর্যটন সেবা দিচ্ছি।"
তবে তিনি দাবি করেন- সুন্দরবন ভ্রমণে বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ ফি কমালে আরও বেশি পর্যটক আসতো।
সুন্দরবনে ঘুরতে আসা জাপানিজ পর্যটক মোকো বলেন, "গল্প শুনে সুন্দরবন দেখার আগ্রহ নিয়ে এসেছিলাম সুন্দরী ইকো রিসোর্টে, তবে বন দেখার পাশাপাশি যে এতো সুন্দর গ্রাম ভ্রমণ এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য দেখতে পারব তা আমরা আশা করিনি।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের ট্যুর গাইড হিসেবে রিসোর্ট মালিক নিজেই দায়িত্ব পালন করেছেন এবং নিজের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করেছেন। আমার জন্মদিনে তারা খুব সুন্দর একটি আয়োজন করেছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।"
করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ইকো-ট্যুরিস্ট ও বনজীবীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে সুন্দরবন।
তিনি আরও জানান, সেই হিসেবে (২৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত করমজলে প্রায় শতাধিক বিদেশি পর্যটক এসেছেন। এ সময় সুন্দরবনের পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন বিদেশি পর্যটকরা।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, এ মৌসুমের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনে ৪ হাজার ৯০৮ জন দেশি পর্যটক ও বিদেশি ৭২ জন পর্যটক এসেছেন।
তিনি আরও জানান, গত বছর এই ২৬ দিনে পর্যটক ছিলেন ২,৩৩২ জন, এরমধ্যে বিদেশি ছিলেন ৭ জন। এ বছর সুন্দরবনে দেশি পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকের আগমন বেড়েছে।