সাগরের তীরে জনস্রোত, ঠাঁইহীন সাজেক
টানা ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মানুষের ঢল নেমেছে। বৈরী আবহাওয়াতেও সাগরের নোনাজলে গা ভেজাতে পর্যটকরা ছুটে এসেছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে।
কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা শুক্রবার লক্ষাধিক পর্যটক অবস্থান করছেন বলে মন্তব্য করলেও এই সংখ্যা আরো বেশি বলে অনুমান করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। অপরদিকে, রাঙ্গামাটির সাজেকে রাত্রীযাপনের জন্য অনেক পর্যটক হোটেল পাননি।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সব ক'টি পয়েন্টে মানুষের ঢল দেখা গেছে। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন আয়োজিত সমুদ্র সৈকতে ৭ দিনের পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল চলছে। যে কারণে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের প্রবেশদ্বার সাজানো হয়েছে রঙিন ছাতায়।
দুবাই প্রবাসী শিহাব করিম বলেন, দীর্ঘ ৭ বছর পর দেশে এসেছি। এখন পরিবার নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। এখানে সৈকতে ঘুরাঘুরির পাশাপাশি পর্যটন মেলা হচ্ছে, পরিবার নিয়ে খুব আনন্দ করছি। বিশেষ করে, সৈকতের প্রবেশদ্বারে রঙিন ছাতাগুলোতে ছবি তুলে খুবই ভাল লেগেছে।
দিনাজপুর থেকে আসা পর্যটক আকরাম হোসেন বলেন, চাকুরি জীবনে খুবই কম ছুটি পাওয়া হয়। এবার টানা ৩ দিনের ছুটিতে একটু প্রশান্তি খোঁজে কক্সবাজার ছুটে আসা।
এদিকে সাগরে বিরাজ করছে বৈরী আবহাওয়া। ঢেউয়ের মাত্রাও বেড়েছে। আবহাওয়াগত কারণে সৈকতের সবকটি পয়েন্টে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তা জোরদার করেছে লাইফ গার্ড সংস্থা।
সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার ইনচার্জ মোহাম্মদ শুক্কুর বলেন, টানা ছুটি ও পর্যটন মেলাকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার সৈকতে এখন লাখো পর্যটক। তাদের অধিকাংশই কিন্তু সমুদ্রস্নানে ব্যস্ত। এখন তাদের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে হিমহিশ খেতে হচ্ছে। তারপরও পর্যটকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, চেষ্টা করছি পর্যটকদের সব্বোর্চ নিরাপত্তা দেয়ার।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল থেকে পর্যটকের আগমণের সংখ্যা বেড়েছে। কক্সবাজারের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেলের ৯৯ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। এ হিসেব মতে শুক্রবার লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজার এসেছেন।
তিনি জানান, পর্যটক দিবস ও সৈকতের উৎসবকে কেন্দ্র করে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে সব হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, বিপুল সংখ্যক পর্যটক এখন কক্সবাজারে। সৈকতের পরিস্থিতি বলছে পর্যটক আগমণের সংখ্যা দেড় লাখের বেশি। যাদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষে চারদিকে নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, আগত পর্যটকরা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও ইনানী, হিমছড়ি, পাটুয়ারটেক সৈকতসহ অন্যান্য স্পটে ভ্রমণে যাচ্ছে। এছাড়া টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল শুরু করায় প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনেও পর্যটকরা ভ্রমণ যাচ্ছেন। যেখানেও নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
সাজেকে ঠাঁই নেই
টানা ছুটিতেও বান্দরবন ও খাগড়াছড়িতে অতটা দেখা মেলেনি পর্যটকের। কিন্তু রাঙামাটির সাজেকের দৃশ্য ভিন্ন। বেড়াতে এসে রিসোর্ট-কটেজে কক্ষ না পেয়ে কয়েকশ' পর্যটক রাস্তা, বারান্দা, স্টোর রুম, গাড়িতে রাত কাটিয়েছেন।
সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সূত্রে জানা জানা যায়, গত মঙ্গলবারের আগে রুইলুই ভ্যালির রিসোর্ট-কটেজের সব কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে যায়। বৃহস্পতি ও শুক্রবার কক্ষ বুকিং ছাড়া অন্তত পাঁচ শতাধিক পর্যটক আসেন। এর মধ্যে অনেকে ফিরে গেলেও অন্তত চার শতাধিক পর্যটক রুইলুই থেকে যান। পর্যটকের চাপে হিমশিম খাচ্ছে রিসোর্ট মালিকরা।
রিসোর্ট মালিক সমিতির সূত্র বলছে, রুম না পেয়ে রাতে তাঁবু এবং স্থানীয় গ্রামগুলোর বাসা-বাড়িতে রাত কাটাচ্ছেন পর্যটকরা।
ঢাকা থেকে পাঁচজনের একটি দলের সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন তরুণ মো. মনির হোসেন। তিনি বলেন, 'দুপুর থেকে রিসোর্ট-কটেজগুলোয় কক্ষ ভাড়া নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি, কিন্তু কোথাও খালি নেই। আমরা সবাই রাস্তায় ঘুরে রাত কাটিয়েছি। আমাদের সঙ্গে আরও অনেক পর্যটক ছিলেন। পূর্ণিমান রাত থাকায় খারাপ লাগে নি'।
সাজেক জুমঘর ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপক ইয়ারং ত্রিপুরা বলেন, বৃহস্পতিবার প্রচুর পরিমাণ পর্যটক এসেছেন সাজেকে। আমাদের কটেজগুলো শতভাগ বুকিং রয়েছে। যারা বুকিং না করে এসেছিলেন তাদের রুম পেতে কষ্ট হয়েছে বলে জেনেছি।
রুইলুই ভ্যালির রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জেরি লুসাই বলেন, যারা রুম পায়নি তাদের জন্য লুসাই ক্লাব ও ত্রিপুরা পল্লীর বাসা-বাড়িতে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমানে সাজেকে ১১২টি রিসোর্ট-কটেজ রয়েছে। এসব রিসোর্ট-কটেজগুলোয় চার হাজারের বেশি অতিথি থাকতে পারেন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, সাজেক পর্যটন কেন্দ্রের একটি নির্দিষ্ট ধারণ ক্ষমতা আছে। ধারণক্ষমতার বেশি পর্যটক আসলেই রুম না পাওয়া বা বাইরে থাকার মত সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে সাজেকের সবকটি রিসোর্ট কটেজের অনলাইন বুকিং সিস্টেম চালু আছে। তাই পর্যটকরা এডভান্স বুকিং দিয়ে আসলেই ভালো, নতুবা সমস্যায় পড়তে হয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে পর্যটকদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে বিশেষ করে টানা বন্ধের দিনগুলোতে সাজেকে এডভান্স বুকিং দিয়ে আসার জন্য।