পারমাণবিক জ্বালানি হস্তান্তর করল রাশিয়া, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের ক্লাবে ঢুকল বাংলাদেশ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে হয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সার্টিফিকেট হস্তান্তর হয়ে গেছে।
এর মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশগুলোর আন্তর্জাতিক ক্লাবে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ।
দেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য জ্বালানি ইউরেনিয়াম গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এই ক্লাবের ৩৩তম দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি ইতোমধ্যেই ইউরেনিয়াম ব্যবহারে উপযুক্ত বলে জানিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী রুশ ঠিকাদার রোসাটম এবং এ খাতের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ১৬৮ টিপিএস (ইউরেনিয়াম বান্ডিল, যার প্রতিটির ওজন সাড়ে ৭ কেজি) দেশে পাঠিয়েছে রাশিয়া। এরপর আজ বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকালে পারমাণবিক জ্বালানির দ্বিতীয় চালান ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।
আজ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ভার্চুয়ালি বিশেষ সনদ ও পরিচালন মডেল হস্তান্তর করেছে দেশটি, যাকে বলা হচ্ছে 'হ্যান্ডস ওভার দ্য সার্টিফিকেট অব ফুয়েল ডেলিভারি অ্যান্ড মডেল অব দ্য ফুয়েল অ্যাসেম্বলি টু দ্য আর্কিটেক্ট'।
প্রকল্প এলাকা পাবনার রূপপুরে রুশ পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের কাছে এই সার্টিফিকেট ও মডেল হস্তান্তর করেন। হস্তান্তর অনুষ্ঠানে রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব আলী হোসেন বলেন, এটি বাংলাদেশের অনন্য অর্জন।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এসোসিয়েশন (আইএইএ) এর মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি বলেন, বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তির সুবিধা পেতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমস্ত কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা হয়েছে। সব ধরনের সেফটি ও সিকিউরিটি নিশ্চিত করেই বাংলাদেশ সনদ পাচ্ছে।
রোসাটমের ডিজি আলেক্সি লিখাচেভ বলেন, 'দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে সম্ভব হয়েছে এ অর্জন। প্রথম ইউনিট নির্মাণ প্রায় শেষ। আগামী বছরের শেষ নাগাদ প্রথম ইউনিটের চুল্লি চালু করা যাবে। আমরা সমস্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। বাংলাদেশের জনবলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কেন্দ্র পরিচালনার উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। '
এ কেন্দ্রে প্রায় ২৩ হাজার লোক কাজ করছেন, যার ১৮ হাজারের বেশি বাংলাদেশি। বাকিরা রাশিয়ান এক্সপার্ট।
এই কেন্দ্র নির্মাণ শেষ হলে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। লিখাচেভ বলেন, কেন্দ্রটির আয়ুষ্কাল ১০০ বছর, যা কয়েক প্রজন্মের জীবনে অবদান রাখবে। রোসাটম সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে তিনি জানান।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, রূপপুর আজ বিশ্ব দরবারে পরিচিত নাম। এটি রাশিয়ার সহযোগিতার জন্যে সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য, রূপপুরের দুই ইউনিট থেকে ১,২০০ মেগাওয়াট করে সর্বমোট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে ২,৪০০ মেগাওয়াট।
রূপপুরের জন্য এই জ্বালানি আসছে রাশিয়া থেকে। রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলে অবস্থিত নভোসিবিরস্কের কারখানায় এসব ইউরেনিয়াম প্রস্তুত করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, রূপপুরের লাইফটাইমে (৮০ বছর) এটি সরবরাহ করবে রাশিয়া।
তবে প্রথম তিন বছর এই জ্বালানি বিনামূল্যে সরবরাহ করবে দেশটি। বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশা অনুযায়ী, পুরো মেয়াদেই জ্বালানি আনতে হবে রাশিয়া থেকে। এজন্য অন্য আরেকটি চুক্তির মাধ্যমে ইউরেনিয়ামে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি বক্তারা বাংলা ভাষায় এবং রুশ বক্তারা রুশ ভাষায় বক্তব্য দেন। প্রযুক্তির মাধ্যমে এক ভাষাকে আরেক ভাষায় রুপান্তর করে শোনানো হয়।
স্বাগত বক্তব্য দেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর। তার বক্তব্যের পরপরই একটি ডকুমেন্টারি দেখানো হয়, যেখানে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন থেকে শুরু করে চুক্তি, নির্মাণকাজসহ বিভিন্ন পর্যায় তুলে ধরা হয়েছে।