অক্টোবরে কেন অস্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছে?
চলতি মাসে বিরতিহীন বৃষ্টিপাত কি আপনার কাছে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে? হ্যাঁ, আপনি সঠিক।
বর্ষা মৌসুম প্রায় শেষের দিকে, তবুও এসময় দেশের কিছু অঞ্চলে কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অনেক জায়গা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া বন্যা আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
কিন্তু এর পেছনের কারণ কী? আর এটাই কি মৌসুমের শেষ বৃষ্টি?
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর উল্লেখ করেছে যে, তিনটি ভিন্ন কারণ এখানে কাজ করছে: বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প এবং বায়ু; প্রচুর পরিমাণে মেঘ জমে থাকা; এবং ইন্ডিয়ান ওশান ডিপোল এর বিকাশ, যা 'ইন্ডিয়ান নিনো' নামেও পরিচিত।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ মোঃ বজলুর রশিদ শুক্রবার (৬ অক্টোবর) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে যে বৃষ্টি হচ্ছে সেটিকে মৌসুমের শেষ বৃষ্টি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।
'প্রতি বছর অক্টোবরের শুরুতে এই ধরনের বৃষ্টিপাত হয়,' যোগ করেন তিনি । তবে এ বছর বৃষ্টিপাত কয়েক দশকের রেকর্ড ভেঙেছে।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে ২৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে- যা ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া ফরিদপুরে ১২৯.৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা জেলায় পুরো বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
শুক্রবার আবহাওয়া অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ২৪ ঘণ্টায় ৪৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে - যা দেশের সর্বোচ্চ।
এছাড়া ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায় যথাক্রমে ৩৪০ মিমি ও ৩১১ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
এদিকে, গত দুই দিনে অন্তত দুই জেলায় টর্নেডো আঘাত হেনেছে। এতে অন্তত একজন নিহত এবং শতাধিক বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে।
বজরুলের মতে, এই খারাপ আবহাওয়ার জন্য উপরে উল্লিখিত পরিস্থিতি দায়ী। তিনি বলেন, সাধারণত উল্লেখিত তিনটি বিষয় একই সময়ে ঘটে না।
এই আবহাওয়াবিদ বলেন, 'বর্ষার শেষ দিনগুলোতে কিছুটা ভারি বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু এবার স্থলভাগে দুটি নিম্নচাপের কারণে পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়েছে।'
বজরুল ব্যাখ্যা করেছেন যে, নিম্নচাপটি বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলে প্রচুর জলীয় বাষ্প এবং বায়ু একত্রিত করে এবং টেনে নিয়েছিল, যা বৃষ্টিপাতকে তীব্র করেছে।
তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে একই সাথে দুটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। নিম্নচাপটি দ্রুত স্থলভাগে চলে গেছে। বৃহস্পতিবার, নিম্নচাপটি ভারতের সিকিম হয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে রাজশাহীতে প্রবেশ করেছে।
'তাই সেদিন রাজশাহীতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছিল। এটি আরও শক্তিশালী হয়ে ময়মনসিংহ হয়ে কিশোরগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে সিলেটের দিকে অগ্রসর হয়েছে।'
এছাড়াও, বিদায়ের আগে বর্ষা শক্তি অর্জন করে এবং বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে মেঘ জমে। তার উপর, ইন্ডিয়ান ওশান ডিপোল (আইওডি) বা ইন্ডিয়ান নিনো বঙ্গোপসাগরকে প্রভাবিত করছে।