নীতি বাস্তবায়নে ধীরগতি, দেশে বাড়ছে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা
কোভিড-১৯ মহামারি, ডেঙ্গু, মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষ করে, শিশু-কিশোরদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। এসব কারণে দ্রুত মানসিক স্বাস্থ্য নীতি বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ২০২২ সালে মানসিক স্বাস্থ্য নীতি করা হলেও তার বাস্তবায়নে এখনও ধীরগতিতে চলছে। ক্রমবর্ধমান মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই নীতির বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী বলেন, "জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য নীতি-২০২২ পাশ হলেও এখনও বিধি প্রণয়ন হয়নি। এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়ে গেছে।"
তিনি আরও বলেন, "করোনা মহামারির সময় মানসিক চাপ বেড়েছে। এরসঙ্গে নতুন করে ডেঙ্গু ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নতুন সংকট তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো বাড়ছে।"
তবে গুরুতর বিষয় হলো, ৯২ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা করাতে আসেন না। অনেকেই জানেন না মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে এসব সমস্যার উন্নত চিকিৎসা রয়েছে; যদিও জেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার সুযোগ এখনও ততটা গড়ে ওঠেনি বলে জানান তিনি।
নীতিমালা অনুযায়ী, দেশে মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। দেশে প্রতি ১,০০,০০০ জনে ০.১৩ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ০.০১ জন অন্যান্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন; এছাড়া রয়েছেন ০.৮৭ জন মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারী নার্স, ০.১২ জন মনোবিজ্ঞানী ও অন্যান্য পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী।
মানসিক স্বাস্থ্যনীতি বাস্তবায়িত হলে, গ্রাম ও শহরে নিবন্ধিত ও যোগ্য মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীদেরকে (মনোরোগবিশেষজ্ঞ, ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানী, কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞানী, সাইকোথেরাপিস্ট, মানসিক সেবাদানকারী নার্স) মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার সকল পর্যায়ে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা ২০১৮-১৯ অনুসারে, দেশের প্রায় ১৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৩ শতাংশ কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত।
দেশে এ বছরের প্রথম আট মাসে অন্তত ৩৬১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন; আগের বছরে এই সংখ্যা ছিল ৫৩২। আঁচল ফাউন্ডেশনের সমীক্ষা অনুসারে, ২০২১ সালে আত্মহত্যা করেছিলেন ১০১ জন শিক্ষার্থী।
পলিসিতে আছে, আত্মহত্যা প্রতিরোধে সকল অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে একটি জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ কর্মকৌশল প্রণয়ন করা হবে। এছাড়া, সাধারণ স্বাস্থ্যশিক্ষা কর্মসূচিতে মানসিক স্বাস্থ্যশিক্ষা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যা স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে প্রদান করা হবে।
স্কুল, এতিম খানা, শিশু পল্লী, শিশু সংশোধনাগার এবং কারাগারের মতো পরিবেশেও শিশু এবং কারাবন্দিদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হবে বলে পলিসিতে উল্লেখ আছে।
সেইসঙ্গে আত্মহত্যা বা আত্মহত্যা চেষ্টার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ পদ্ধতি ও বিশ্লেষণের মানোন্নয়ন করা হবে, যা আত্মহত্যার কারণ বুঝতে ও প্রতিরোধে বিশেষ সহায়তা করবে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মেন্টাল হেলথ পলিসি আছে, কিন্তু আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এর বাস্তবায়ন। মেন্টাল হেলথের জন্য আলাদা অপারেশনাল প্ল্যান লাগবে, ডেডিকেটেড হিউম্যান রিসোর্স লাগবে, আলাদা গভর্নেন্স লাগবে। সেগুলো এখনো তৈরি হয়নি।"
"এরজন্য পলিসিতে যা যা বলা আছে, সেগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে এখন পলিসি বাস্তবায়ন করা জরুরি," যোগ করেন তিনি।