সোশ্যাল মিডিয়াতেও ‘স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ বার্তা বাধ্যতামূলক চান মার্কিন সার্জন জেনারেল
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতেও যেন ব্যবহারকারীদের জন্য তামাকের মতো 'স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর' ধরনের বার্তা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সার্জন জেনারেল বিবেক এইচ মূর্তি।
তিনি দাবি করেছেন, এসব প্ল্যাটফর্ম শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে—ব্যবহারকারীদের এই বার্তা দেওয়া যেন সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত এক মতামত কলামে মূর্তি বলেন, তরুণদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সংকট এক গুরুতর সমস্যা। এ সমস্যায় 'গুরুত্বপূর্ণ অবদান' রেখেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
ওই নিবন্ধে তিনি কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে যেন একজন সার্জন জেনারেলের সতর্কবার্তা দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়। ওই সতর্কবার্তায় যেন 'বাবা-মা ও কিশোর-কিশোরীদের নিয়মিত স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে সোশ্যাল মিডিয়া নিরাপদ প্রমাণিত হয়নি'।
মার্কিন সার্জন জেনারেল বলেন, তার মতে, সতর্কবার্তায় এমন ভাষা ব্যবহার করতে হবে যা ব্যবহারকারীকে এসব ওয়েবসাইট ও অ্যাপের সম্ভাব্য মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন করবে।
সিগারেট যে ফুসফুসের ক্যানসার ও হৃদরোগের কারণ হতে পারে, ১৯৬৫ সালে তা সিগারেটের প্যাকেটে লেখা বাধ্যতামূলক করে কংগ্রেস।
মূর্তি তার নিবন্ধে বলেন, তামাকপণ্যের সতর্কবার্তা থেকে প্রমাণ হয়েছে যে সার্জন জেনারেলের হুঁশিয়ারি সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারে। তবে সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, শুধু সতর্কবার্তাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিরাপদ হয়ে যাবে না।
তিনি লিখেছেন, অনলাইনকে আরও নিরাপদ করতে এবং শিশুদের সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে বাঁচাতে কংগ্রেস, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানি, বাবা-মা ও অন্যরা একসঙ্গে মিলে উদ্যোগ নিতে পারে।
ওই নিবন্ধে মার্কিন সার্জন জেনারেল লিখেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানো যেভাবে বাড়ছে, তাতে শিশুদের উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ইউটিউব, টিকটক, ইনস্টাগ্রামের মতো শীর্ষ প্ল্যাটফর্মগুলোতে শিশুরা দিনে গড়ে প্রায় ৫ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে। ২০১৯ সালের গবেষণায় অ্যাসোসিয়েশন দেখেছে, ২০১৭ সালে তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যামূলক চিন্তা বা কাজের অনুপাত ২০০৮ সালের চাইতে ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে এ বয়সি মানুষের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার বেড়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটিতে তরুণদের ওপর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব-সংক্রান্ত এক শুনানি হয়। সেখানে যেসব বাবা-মা বলেছেন ইনস্টাগ্রাম তাদের সন্তানদের আত্মহত্যা বা নিপীড়নে ভূমিকা রেখেছে, তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ইনস্টাগ্রামের মূল কোম্পানি মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ।
গত বছর মার্কিন সার্জন জেনারেল হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়া যে শিশু ও টিনেজারদের জন্য নিরাপদ, তার সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। তিনি আরও বলেন, গাড়ির সিট, বেবি ফর্মুলা, ওষুধসহ শিশুদের ব্যবহৃত অন্যান্য পণ্যের মতোই সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতি রোধেও পদক্ষেপ নিতে হবে নীতিপ্রণেতাদের।