ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজে যেন কোনো হকার না বসে: মেয়র আতিক
প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২০৬ ফুট লম্বা ও ২১ ফুট প্রস্থের ফার্মগেটের ফুটওভার ব্রিজটি সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
রবিবার দুপুরে এ ফুটওভার ব্রিজটি উদ্বোধন করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা জাতীয় সংসদ ভবনের ডিজাইনের সাথে মিল রেখে এটি নির্মাণ করা হয়েছে।
ফুটওভার ব্রিজটির শৈল্পিক নকশার কারণে এখন থেকে সাধারণ পথচারী এটি ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্যে রাস্তা পার হতে পারবে। এছাড়াও ব্রিজটি থেকে সরাসরি নিকটস্থ বিপণিবিতানে প্রবেশের জন্য রয়েছে কয়েকটি প্রবেশ মুখ।
গত বছরের মে মাসে ফুটওভার ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এর নির্মাণ কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্টরা। ঢাকার মধ্যে এটিই সবচেয়ে সুপ্রশস্ত ফুটওভার ব্রিজ। এ ব্রিজটিতে রয়েছে ৬টি পকেট, যেখানে দাঁড়িয়ে নিচের রাস্তা সহ আশাপাশের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। পকেটগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যা পথচারীদের চলাচলে কোনও প্রতিবন্ধকতা সুষ্টি করবে না। আপাতত ফুটওভার ব্রিজটির দুই দিকেই শুধু সিঁড়ি বসানো হয়েছে। তবে পরে ফুটওভার ব্রিজের দুই প্রান্তেই এক্সেলেটর এবং লিফট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, "ঢাকা উত্তর ও ডিএমপি মিলে ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজ হকারমুক্ত দেখতে চাই কারণ ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজ আমাদের একটি হার্ট। যদি এখানে কোনো হকার বসে তাহলে এটি নষ্ট হয়ে যাবে। এখানে মানুষজন চলতে কষ্ট পাবেন। এখানে যেন কোনো হকার না বসতে পারে এবং কোনো ভবঘুরে যেন না থাকতে পারে এ জন্য ডিএমপি কমিশনারকে অনুরোধ জানাচ্ছি।"
মেয়র আরও বলেন, "খেয়াল রাখতে হবে কেউ যাতে এ স্থাপনাকে নোংরা না করে। এটা সাধারণ পথচারীদের চলাচলের রাস্তা কেউ যাতে কোনো ভাবে বিঘ্ন না ঘটাতে পারে।"
এ সময় তিনি কোনো কোম্পানীর বিজ্ঞাপন প্রচারের অংশ হিসেবে তাদের কাছ থেকে অপরিকল্পিভাবে পুলিশবক্স না করানোর জন্য অনুরোধ করেন। এতে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং দৃশ্য দূষণ হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ সময় ফুটওভার ব্রিজের অদূরে নির্মিত একটি পুলিশবক্সেরও উদ্বোধন করা হয়।
ফুটপাত বন্ধ না করে, জনসাধারণের চলাচল স্বাভাবিক রেখে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত একটি পুলিশবক্স নির্মাণের জন্য উত্তরের মেয়রকে ধন্যবাদ জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
ঢাকা উত্তর সিটি জানায়, জাতীয় সংসদ ভবনের স্থপতি লুই আই কানের শেরেবাংলা নগরের মাস্টারপ্ল্যানের শুরু এই ফার্মগেট মোড় থেকে। তার স্থাপত্য চর্চা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই নকশা করা হয়েছে। এটি নির্মাণে অর্থ প্রদান করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। চলন্ত সিঁড়ির সুবিধাসহ ২০৬ ফুট লম্বা ও ২১ ফুট প্রস্থের এই ফুট ওভারব্রিজটি সার্বক্ষণিক সিটি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।
সবসময় ফুটওভার ব্রিজটি হকারমুক্ত দেখতে চান পথচারীরা
হলিক্রস স্কুলের শিক্ষার্থী তাসমিমা আক্তার রবিবার উদ্বোধন হওয়া ফার্মগেটের ফুটওভার ব্রিজটি পারাপারের সময় এর মাঝের একটি করিডোরে দাঁড়িয়ে বান্ধবীদের সাথে মোবাইলে ছবি তুলছিলেন। সবাই উৎফুল্ল ছিল কারণ প্রায় দুই বছর পরে ফার্মগেট গোলচত্বরের এ ফুটওভার ব্রিজটি খুলে দেওয়া হয়েছে। এটিই রাজধানীর সবচেয়ে চওড়া ফুটওভার ব্রিজ যা নির্মাণ করা হয়েছে সংসদ ভবনের আদলে।
তাসমিমা আক্তার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "প্রতিদিন রাস্তার এ অংশ পারাপার হতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হতো যার অবসান আজকে হলো। কিন্তু এরপরেও শঙ্কা এতো সুন্দর একটি ফুটওভার ব্রিজ কি-না আবার হকারদের দখলে চলে যায়! আজকে ব্রিজটি উদ্বোধন হতে গিয়ে যেভাবে পুরো এলাকার ফুটপাত হকারমুক্ত রাখা হয়েছে এমন চিত্রই আমরা দেখতে চাই আমাদের শহরের।"
শুধু তাসমিমারই নয়, এ এলাকায় চলাচলকারী পথচারীদের দাবি ফার্মগেটের ফুটওভার ব্রিজটি যেন হকারমুক্ত রাখা হয়।