রাস্তায় সীমিত গণপরিবহন, বন্ধ দূরপাল্লার বাস
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৩ দিনের অবরোধের দ্বিতীয় দিনে আজ (১ নভেম্বর) সড়ক মহাসড়কে সীমিত আকারে চলছে গণপরিবহন।
অপরদিকে বন্ধ রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের সব ধরনের যাত্রীবাহী বাস।
এদিকে প্রথম দিনের মত অবরোধের ২য় দিনেও সড়ক মহাসড়কে গণপরিবহন সংকট থাকায় ব্যপক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে অফিসগামী যাত্রীদের।
সকাল ঢাকার সাভারের আমিনবাজার, হেমায়েতপুর, সাভার, নবীনগর, বাইপাইলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকা থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গণপরিবহন চলছে অত্যন্ত সীমিত আকারে।
সকাল ৮টা পর্যন্ত সড়ক মহাসড়কে কিছু গণপরিবহন দেখা গেলেও তা ছিলো অপর্যাপ্ত। সকাল ৮টার পর থেকে এর সংখ্যা আরও কমে আসতে শুরু করে।
এতে করে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয় অফিসগামী যাত্রীদের। অনেক যাত্রীকে এসময় লেগুনা, অটোরিকশাসহ বিভিন্নভাবে বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়।
সকালে সাভারের হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ রাশেদ নামে এক যাত্রী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আধাঘণ্টা যাবত অপেক্ষা করছি। মতিঝিল যাবো, কিন্তু বাস পাচ্ছি না। যাও পাচ্ছি সেগুলোতে পা রাখার জায়গা নেই।"
সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষমাণ শারমিন নামে একজন নারী টিবিএসকে বলেন, "গতকালও লেগুনায় ভেঙ্গে ভেঙ্গে কল্যাণপুরে গিয়েছি। কিছুদূর পরপর লেগুনা বদলাতে হয়। কিছুদুর পায়ে হাঁটতে হয়। লেগুনাতেও জায়গা পাওয়া যায়না, অনেক ভীড়। প্রচণ্ড ভোগান্তি হচ্ছে।"
সাভার থেকে মিরপুর রুটে চলাচলকারী ইতিহাস পরিবহনের লাইনম্যান সাইদুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "স্বাভাবিক সময়ে ১০০-এর বেশি গাড়ি চলে সড়কে। আজ ৩০টার মত বাস চলছে। আতঙ্কে মালিকরা বাস সড়কে নামাচ্ছে না। আবার সকালের দিকে সড়কে অফিসগামী কিছু যাত্রী থাকলেও এরপর আর যাত্রীও পাওয়া যায়না।"
গুলিস্তান রুটে চলাচলকারী ধামরাই-গুলিস্তান পরিবহনের আনিস নামে একজন বাস চালক বলেন, "ব্যানারে গাড়ি আছে ২০০ এর অধিক, কিন্তু চলছে ১৫/২০টা। আমিও এখন বন্ধ করে দিবো গাড়ি, সড়কে যাত্রী নাই। অফিস টাইমের জন্য বের হইছিলাম।"
পাটুরিয়া থেকে গাবতলী রুটে চলাচলকারী সেলফি পরিবহনের বাস চালক শাহেদ টিবিএসকে বলেন, "কাল তো তেমন গাড়ি চলেনি। আজ আমাদের ১৫/২০টার মতো বাস চলছে। চললে কী হবে, যাত্রী তো নাই তেমন।"
অন্যদিকে সাভার পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোহেল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গতকাল অর্ধেক, অর্থাৎ ৬০/৭০টা বাস আমাদের চললেও আজ সব গাড়ি বের হইছে। কিছুটা আতঙ্ক তো থাকা স্বাভাবিক, তাছাড়া রোডে যাত্রী সংকট খুব।"
বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ রুটের দূরপাল্লার বাস
এদিকে অবরোধের দ্বিতীয় দিনে সড়কে গণপরিবহন কিছুটা চললেও গতকালের মত আজও বন্ধ রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ দূর পাল্লার যাত্রীবাহী বাস।
দুপুর ১২ টা পর্যন্ত গাবতলী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি।
এসময় বাস টার্মিনালে যাত্রীও দেখা যায়নি। বেশিরভাগ কাউন্টার বন্ধ দেখা গেছে।
হানিফ এন্টারপ্রাইজের গাবতলী টিকেট কাউন্টারের ম্যানেজার জাকির মল্লিক বলেন, যাত্রী নেই তাই গাড়ি ছেড়ে যায় নি।
এদিকে, সকাল থেকেই সাভার ও নবীনগর দূরপাল্লার বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায় হাতে গোনা কয়েকটা পরিবহনের কাউন্টার খোলা থাকলেও বাকিগুলো বন্ধ।
দু'একটি পরিবহন ট্রিপ ছাড়ার প্রস্তুতি নিলেও যাত্রী সংকটে সেগুলোও বাতিল করা হয়।
সাভারের শ্যামলী এন আর কাউন্টার মাস্টার রায়হান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা উত্তরবঙ্গের সিডিউল ওপেন করে বসে আছি, কিন্তু যাত্রী তো নাই। যাত্রী না থাকায় গাড়ি ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। যে'কজন যাত্রী হয়, তাতে খরচ উঠবে না।"
সাভারের শ্যামলী পরিবহনের দক্ষিনবঙ্গ রুটের কাউন্টার মাস্টার স্বপন জানান, যাত্রী সংকটের কারণে তারা গাড়ি বন্ধ রেখেছেন।
নবীনগর বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনালটির ৩০টি কাউন্টারের মধ্যে মাত্র ৩টি কাউন্টার খোলা আছে। এরমধ্যে সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার শুভ আচার্য্য টিবিএসকে বলেন, "গতকালের মত আজও আমাদের বাস চলাচল বন্ধ আছে।"
দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী এমআর পরিবহন ও রয়েল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার সঞ্জয় রায় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গতকালও আমাদের গাড়ি বন্ধ ছিলো, আজও বন্ধ আছে। তাছাড়া যাত্রীও নাই। আমরা কাউন্টার পরিষ্কার করতে খুলেছি, একটু পর কাউন্টারও বন্ধ করে দিবো।"
সাতক্ষীরা এক্সপ্রেসের কাউন্টার মাস্টার আতিকুর রহমান জানান তাদেরও সব গাড়ি বন্ধ রয়েছে।
"শুধু আমরা না, দূরপাল্লার সব পরিবহনই বন্ধ," বলেন তিনি।
বরিশাল রুটের সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার হারুন তালুকদার বলেন, "গাড়ি বন্ধ। একটি গাড়ি ছাড়ার প্লান আছে, কিন্তু টিকিট বিক্রি হয়েছে মাত্র ৪টি। সম্ভবত এই ট্রিপটাও ছাড়া যাবে না। যাত্রী পর্যাপ্ত না হলে কিভাবে ট্রিপ ছাড়বো।"
দূরপাল্লার রুটগুলোতে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকে।
নবীনগর টার্মিনাল ঘুরে এমন কয়েকজন যাত্রীর সাথে কথা বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
হাসান নামে একজন যাত্রী বলেন, "খুলনায় যাবো। কাজের উদ্দেশ্যে ঢাকায় এসেছিলাম, এখন ফিরতে হচ্ছে। কিন্তু কোন বাস ছাড়ছে না। চরম বিপদে পড়ছি। হয়তো রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।"
সুব্রত নামে একজন যাত্রী বলেন, "খবরে তো দেখেছি বাস চলবে। এখন তো এসে দেখি কাউন্টারই সব বন্ধ।"
একটি কাউন্টারে অপেক্ষমাণ রফিকা সুলতানা নামে একজন নারী যাত্রী বলেন, "সকালে আশুলিয়ার আনারকলী এলাকা থেকে টার্মিনালে এসেছি। এসে দেখি কোন বাস ছাড়ছে না। গোপালগঞ্জ যাবো। সাথে বাচ্চা ও ব্যাগপত্র আছে। এসব নিয়ে কি আবারো ফিরে যাওয়া সম্ভব?"
এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করে, ভোগান্তি পোহায় সাধারণ মানুষ। চারদিকে যা হচ্ছে, ঘর থেকে বের হতেই ভয় লাগে। তাও বাধ্য হয়ে বের হতে হয়। যারা রাজনীতি করে, তাদের উচিত আগে সাধারণ মানুষের সুবিধা, তাদের স্বার্থ ঠিক রাখা, এরপর সব আন্দোলন। আমরা একটু শান্তি চাই।"
জিহাদ নামে এসময় একজন কাউন্টার মাস্টার বলেন, একটি গাড়ি ট্রিপ নিয়ে গেলে ২৫/৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। তার উপর আছে বাস পোড়ানো নিয়ে আতঙ্ক।