চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার ঘটনায় রয়টার্সের তথ্য সরকার যেভাবে ভুল প্রমাণ করল
চট্টগ্রামে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় রয়টার্সের করা এক প্রতিবেদনের বস্তুনিষ্ঠটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এবার আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থার করা সেই সংবাদের তথ্যগত অসঙ্গতি নিয়ে পাল্টা জবাব দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
ড. ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ফেসবুক পোস্টে ব্যাখ্যাসহ প্রতিবেদনটির বিতর্কিত দিকগুলো তুলে ধরেছেন। একইসাথে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বার্তা সংস্থাটির দাবির বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দিতে ১০০ শতাংশ নির্ভুল ও শক্তিশালী প্রমাণের দরকার ছিল বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
রয়টার্সে 'One Killed in Bangladesh as Hindu protesters clash with police' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার লিয়াকত আলী খানের নামে একটি বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। সেখানে তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, "আদালতের বাইরে বিক্ষোভের মধ্যে দাসের পক্ষের একজন মুসলিম আইনজীবী নিহত হন (চট্টগ্রামে)।"
তবে সরকারের প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রয়টার্স বা কোনো সাংবাদিক এই বিষয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) লিয়াকত আলী খানের সঙ্গে কথা বলেননি। ঘটনার সময়ে তিনি আদালত প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজে দায়িত্বরত ছিলেন। তবে তিনি সংবাদের জন্য কাউকে মন্তব্য দেননি।
এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে লিয়াকত নামে চারজন কন্সটেবল আছেন। নিশ্চিত হতে তাদের সাথেও সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তবে তারাও কাউকে কোনো বক্তব্য দেননি বলে জানান।
শফিকুল আলম ফেসবুক পোস্টে বলেন, "নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ যে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী ছিলেন না সেটি প্রমাণ করতে গত রাতে অনেক সময় লেগেছে। আমরা পাবলিক প্রসিকিউটরসহ চট্টগ্রামের আধা-ডজন আইনজীবীর সাথে কথা বলেছি এটা নিশ্চিত করতে যে, তিনি চিন্ময়ের আইনজীবী ছিলেন কি-না। আমরা পাবলিক প্রসিকিউটর ও এসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটরের একটি তালিকা পেয়েছি। সেখানে তার নাম ছিল না। আমরা অবশেষে রাত ১১টার দিকে ওকালতনামা পাই। এতে প্রমাণিত হয় যে, তিনি ঐ হিন্দু নেতার আইনজীবী ছিলেন না।"
এর প্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে সংবাদ সংশোধনের জন্য রয়টার্সের এডিটর বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠির কয়েক মিনিট পরেই সংবাদটি সংশোধন করে প্রকাশ করা হয়।
ফেসবুক পোস্টে প্রেস সচিব জানান, একইসাথে আজ (বুধবার) সকালে একটি বিভ্রান্তিকর ভিডিও সরাতে রয়টার্সের সাথে ফের সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। অনুরোধের প্রেক্ষিতে রয়টার্স ভিডিওটি সরিয়ে নেয়। এছাড়াও ভয়েজ অব আমেরিকা রয়টার্সের পুরনো রিপোর্ট উদ্ধৃত করে সংবাদ পরিবেশন করছিল বিধায় এই সংবাদমাধ্যমের সাথেও যোগাযোগ করা হয়।
অন্যদিকে রয়টার্সের করা প্রতিবেদন বস্তুনিষ্ঠ নয় জানিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। আজ (বুধবার) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানায় সিএমপি। একইসাথে এই বিবৃতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকেও শেয়ার করা হয়।
ফেসবুক পোস্টে শফিকুল আলম বলেন, "মিথ্যা ও ভুল সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়া সহজ। তবে এটি ভুল প্রমাণ করতে অনেকক্ষেত্রে কয়েক দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। ১৩ বছর এএফপির ঢাকা ব্যুরোর চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন কখনো কখনো একটি ভুল সংবাদ প্রমাণে আমাদের কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যেত। আবার এক্ষেত্রে আপনাকে শতভাগ নিশ্চিত হতে হয় যে, ভুল প্রমাণ করতে গিয়ে যেন আপনি কোনো ভুল না করে বসেন।"
এদিকে সিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, "কারও বক্তব্য গ্রহণ না করেই নিজেদের মনগড়া বক্তব্যকে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য বলে চালিয়ে দেওয়া সাংবাদিকতার নীতিমালা পরিপন্থি। ভবিষ্যতে রয়টার্সসহ সকল গণমাধ্যম এই ধরনের সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।"