রাজনৈতিক সহিংসতা কমাতে ঢাকার প্রধান সড়কগুলোয় ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি: ডিএমপি
আগামীকাল পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য সহিংসতার ঘটনা কমাতে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোকে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারিতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) ডিএমপির সদর দপ্তরে কমিশনার মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রায় চার ঘন্টাব্যাপী বৈঠকে প্রতিটি বাসে কমপক্ষে দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য পরিবহন সমিতির নেতাদেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সভার মূল আলোচ্যবিষয় ছিল আগুন-সন্ত্রাসীদের দমনের জন্য পুলিশের প্রস্তুতি।
দেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার মুখে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদেরও যেকোনো সহিংসতার ঘটনা এড়াতে বুধবার থেকে 'আরও সতর্ক' থাকতে বলা হয়।
বিএনপি ও জামায়াত উভয় দলই বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করার জন্য বলেছে। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আগামীকাল একটি লাইভ ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ভাষণে তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে অনেকে ধারণা করছেন।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র তিন প্রধান দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ও জাতীয় পার্টির মধ্যে 'শর্তহীন সংলাপের' আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।
ডিএমপির বৈঠকের অগ্নিসংযোগকারীদের দমনে পুলিশের প্রস্তুতির ওপর বেশি আলোকপাত করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ১৬ দিনে দেশে গড়ে ৯টির বেশি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার আর কোনো সমালোচনা এড়াতে পুলিশ সদস্যদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই এমন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার না করার জন্যও বলা হয়েছে।
বৈঠকে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদ বলেন, 'তারা [যেসব দল অবরোধ ডেকেছে] ২০১৪–১৫ সালের মতো খুব বেশি [অস্থিতিশীলতা] সৃষ্টি করতে পারেনি। কিছু পার্ক করা বাসে আগুন দেওয়া হলেও তারা রাজধানী দখল করতে পারেনি। এমনকি জেলা পর্যায়ে দেশবাসীকেও আতঙ্কিত করতে পারেনি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও আমাদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে।'
সভায় বক্তৃতাকালে ডিএমপির একজন কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন যে, দাঁড় করিয়ে রাখা বাসগুলোই অগ্নিসংযোগকারীদের প্রধান লক্ষ্য।
তিনি এ ধরনের বাসের জানালা বন্ধ রাখার অনুরোধ করেন এবং মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে আরও সতর্ক থাকতে বলেন। কারণ বেশিরভাগ দুর্বৃত্তই সাধারণত মোটরসাইকেলের এসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
সভায় জানানো হয়, ২৮ অক্টোবরের পর রাজধানীতে মোট ৫২টি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মিরপুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি – মোটা ১৫টি – বাসে আগুন দেওয়া হয়।
বৈঠকে ডিএমপির সব অপরাধ বিভাগ ও থানাকে ফুটেজ বিশ্লেষণ করে যেকোনো উপায়ে অগ্নিসংযোগে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে বলা হয়।
২৮ অক্টোবর বিএনপির ডাকা সমাবেশের কথা বলতে গিয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, 'একজন পুলিশ নিহত এবং অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাই সময় হলে জাতির সেবা করতে দ্বিধা করবেন না।'
২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির নয়াপল্টনে সমাবেশ করে। সমাবেশ মাঝপথে স্থগিত করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল পরদিন হরতাল ঘোষণা করেন।
পরদিন ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর আমীর খসরু ও মোয়াজ্জেম হোসেনসহ বিএনপির অন্যান্য নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তারপর বিএনপি হরতাল এবং অবরোধ ঘোষণা করে। একই দাবিতে আন্দোলন করা জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলগুলোও এসব হরতাল-অবরোধে যোগ দেয়।
এর পরের ১৬ দিনে দেশে গড়ে নয়টির বেশি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এসব সহিংসতায় একাধিক ব্যক্তি নিহত হন। এ তালিকায় একজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।
আগামীকাল বা পরশু আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। এর ফলে দেশে আবারও নতুন করে রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।