এবার মিঠা পানির কুমির প্রকৃতিতে ফেরানোর চেষ্টা
সুন্দরবনের লবণাক্ত পানির কুমিরের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে সক্ষম হয়েছে বন বিভাগ। এবার দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মিঠা পানির কুমির প্রকৃতিতে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তিনটি মিঠা পানির কুমির উদ্ধার করেছে বন বিভাগের বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। ওই কুমিরগুলোকে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
যদিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ২০০০ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেছিল মিঠা পানির কুমির বাংলাদেশ থেকে একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বন বিভাগ জানায়, গত ১৭ অক্টোবর ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের ভুবেনশ্বর নদ থেকে ৯০ কেজি ওজনের একটি পুরুষ কুমির উদ্ধার করা হয়।
পরে ২১ অক্টোবর পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের একটি জলাশয় থেকে ৮০ কেজি ওজনের একটি স্ত্রী কুমির উদ্ধার করা হয়।
একই মাসের ২৮ তারিখে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের মাইগ্রাম দাসপাড়ার বিল থেকে আরেকটি ৮০ কেজি ওজনের স্ত্রী কুমির উদ্ধার করা হয়, যা গত ৮ অক্টোবরে করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৫, ২০১৮ ও ২০২১ সালেও প্রকৃতি থেকে কয়েকটি মিঠা পানির কুমির উদ্ধার করেছিল বন বিভাগ। তবে সেগুলোকে গাজীপুরের সাফারি পার্কে রাখা হয়েছিল।
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা কার্যালয়ের মৎস্য বিশেষজ্ঞ মো. মোফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, "আগে উদ্ধার করা কুমিরগুলো সাফারি পার্কে রাখা হয়েছিল। তবে সেখান থেকে বাচ্চা উৎপাদনে তেমন অগ্রগতি হয়নি। তাই এবার আমরা কুমিরগুলোকে করমজলে রেখেছি।"
"সাফারি পার্কে অনেক প্রজাতীর প্রাণী থাকে, শুধু কুমির নিয়ে ব্যাপক পরিচর্যা হয় না। আর করমজল হচ্ছে দেশের একামাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্র। সেখান থেকে আগে লবণাক্ত পানির কুমিরের বাচ্চা উৎপাদনে বেশ সফলতা পাওয়া গেছে," বলেন তিনি।
সারা পৃথিবীতে মোট ২৬ প্রজাতির কুমির রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশে ৩টি প্রজাতির কুমির প্রকৃতিতে পাওয়া যেত। যেগুলো হল, লবণাক্ত পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়াল। তবে আইইউসিএন ইতোমধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়ালকে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত ও লবণাক্ত পানির কুমিরকে রেড লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, "যে দুই প্রজাতির কুমির বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলিও মাঝেমধ্যে দেশের বিভিন্ন নদী ও জলাশয় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।"
তিনি বলেন, "বর্তমানে করমজলে যে তিনটি মিঠা পানির কুমির পাঠানো হয়েছে, তাদের বয়স ১০ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে। এখানে তাদের নিবিড় পরিচর্যা করা হবে। এখানে বাচ্চা উৎপাদন করতে পারলে আমরা আবারও হারিয়ে যাওয়া কুমির নদীতে ফিরিয়ে দিতে পারবো।"
আজাদ কবির বলেন, ইতোপূর্বে সুন্দরবনে লবণাক্ত পানির কুমিরের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছিল। তবে করমজলে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে।
বিভিন্ন বন্যপ্রাণির প্রজনন, সংরক্ষণ ও বংশ বিস্তারের উদ্দেশ্যে করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয় ২০০০ সালে। সেখানে ২০০৫ সালে লবণাক্ত পানির কুমির প্রথম ডিম দেয়। এখন পর্যন্ত করমজলে বিভিন্ন সময় ৩ শতাধিক লবণাক্ত পানির কুমির ছানার জন্ম হয়েছে। যারমধ্যে ১০০টি এখনো খাঁচায় আছে। বাকি ২০০টি মত কুমিরের ছানা সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে অবমুক্ত করা হয়েছে।
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, "বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কুমির নদীতে ফিরিয়ে আনতে বন বিভাগ কাজ করছে। ইতোমধ্যে আমরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লবণাক্ত পানির কুমির সুন্দরবনে অবমুক্ত করতে পেরেছি। এক্ষেত্রে করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্র সফলতা অনেক বেশি। ওই কেন্দ্রটিকে আরও আধুনিকরণ করা হবে।"