ঢাকার সংসদীয় আসনগুলোয় আ. লীগের মনোনয়ন: নতুন, পুরোনো ও পরীক্ষিত প্রার্থী যারা
জাতীয় নির্বাচনে বরাবরই বহুল কাঙ্ক্ষিত থাকে রাজধানী ঢাকার ২০টি সংসদীয় আসন। রোববার (২৬ নভেম্বর) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দুই আসন বাদে ২৯৮ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। সেই সূত্রে দেখা যাচ্ছে, এবার ঢাকার কাঙ্ক্ষিত আসনগুলোয় নতুন মুখদের পাশাপাশি– পুরোনো যারা এবার মনোনয়ন পেয়েছেন তাঁরাও আছেন।
আনকোড়া নতুনদের মধ্যে প্রথমেই বলা যায় সাঈদ খোকনের নাম। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
খোকন অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে। তিনি দ্বিতীয়বারেও মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। তবে সেসময় দল মনোনয়ন দেয় শেখ ফজলে নুর তাপসকে। এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে খোকন বলেছিলেন, 'আমি আনন্দের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছি, কারণ তিনিই আমার অভিভাবক।'
এবার সাঈদ খোকন তারই পুরষ্কার পেলেন বলে মনে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁকে ঢাকা-৬ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এই আসনের সাংসদ হলেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ।
ঢাকা-৭ আসনে ক্ষমতাসীন দলের অপর নতুন মুখ হলেন মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম। তিনি এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে। নির্বাচনী এলাকায় এ পরিবারের রাজনৈতিক সমর্থন ও প্রভাবের বিবেচনা থেকেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এ সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, ভোটের মাঠে নতুন হলেও নির্বাচনী এলাকায় ভালোভাবেই পরিচিত সোলায়মান সেলিম।
এ ছাড়া, পুরোনোদের মধ্যে যারা এবার দলীয় প্রতীক পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন জাহাঙ্গীর কবির নানকের মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিক। ঢাকা-১৩ আসনে যিনি দুই দুবার নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে।
বর্তমানে দলের এই প্রেসিডিয়াম সদস্যকে ২০১৮ সালে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তাঁর বদলে মনোনয়ন পান সাদেক খান এবং নির্বাচিতও হন।
ঢাকার আসনগুলোয় পুরোনো যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আরও আছেন সানজিদা খানম। তিনি ঢাকা-৪ আসনে নির্বাচনে ভোট করবেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে সানজিদা আওয়ামী লীগের হয়ে এ আসনে জয়লাভ করেন। তবে দলীয় নির্দেশনা মেনে এরপরের নির্বাচনে এ আসনের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন তিনি। তবে দশম জাতীয় সংসদে সানজিদাকে সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ হিসেবে রাখা হয়।
দীর্ঘ রাজনীতির ঐতিহ্য থাকা আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম ভোট করবেন ঢাকা-৮ আসনে। তিনি ২০১৪-২০১৮ সাল পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন। ২০১৪ এর নির্বাচনে মাদারীপুর- আসনে জয়লাভ করেন তিনি। ঢাকায় তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হলো এবার, সে হিসাবে তিনি নতুন।
তবে ঢাকায় নতুন মুখদের পাশাপাশি পুরোনো ও পরীক্ষিতদেরও রেখেছে আওয়ামী লীগ। যেমন ঢাকা-১ আসনে আবারো নৌকা প্রতীকে লড়বেন প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ২ লাখ ৬ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে ২০১৮ সালে এই আসনে নির্বাচিত হন সালমান এফ রহমান।
২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দেওয়া সালমান এফ রহমান দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান।
ঢাকা-২ আসনের বর্তমান সাংসদ মো. কামরুল ইসলাম এবারো দলীয় মনোনয়ন লাভ করেছেন। ২০০৮ সাল থেকেই এ আসনের সাংসদ হিসেবে রয়েছেন তিনি। সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে– রাজনীতি ও ক্ষমতার নানান মহলে তাঁর প্রভাব ব্যাপক।
ঢাকা-৩ আসনেও পরীক্ষিত প্রার্থীতেই আস্থা রেখেছে আওয়ামী লীগ। এই আসনে আবারো মনোনয়ন পেয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ (বিপু)। ২০০৮ সাল থেকেই তিনি এ আসনের সাংসদ হিসেবে রয়েছেন। ২০০৮ এর নির্বাচনে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ভোটযুদ্ধে হারান তিনি।
ঢাকা-৯ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে সাবের হোসেন চৌধুরীকে। তিনিও ২০০৮ সাল থেকে এই আসনের সাংসদ। সাবের ছিলেন জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি।