ব্যবসা বাড়লেও পাঁচ বছরে সম্পদ কমেছে শামীম ওসমানের
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের হলফনামা অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে কমেছে তার সম্পত্তি। নিজের পাশাপাশি তার স্ত্রীর সম্পদও কমে এসেছে। তবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে শামীম ওসমানের।
গত ২৯ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা প্রদানকালে হলফনামায় এসব তথ্য উল্লেখ করেন তিনি। ২০১৪ সালের হলফনামার চাইতে ২০১৮ সালে সম্পত্তি বৃদ্ধি পেলেও ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে কমেছে সম্পত্তি।
হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, 'শামীম ওসমানের বর্তমান অস্থাবর সম্পত্তি ৭ কোটি ৯৮ লাখ ৬৩ হাজার ৫৪৭ টাকা। ২০১৮ সালে তার অস্থাবর সম্পত্তি ছিলো ১০ কোটি ৬০ লাখ ৭৪ হাজার ৮৩৯ টাকা।'
শামীম ওসমান তার আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন ব্যবসা, শেয়ার সঞ্চয়পত্র ব্যাংক আমানত সুদ, বাড়ি ভাড়া, সংসদ সদস্য ভাতা এবং পারিতোষিক। গতবারের তুলনায় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান একটি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- মেসার্স জেড এন কর্পোরেশন, জেড এন শিপিং লাইসেন্স লিমিটেড, মাইশা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, খান ব্রাদার্স ইনফোটেক লিমিটেড, উইজডম নিটিং মিলস লিমিটেড।
ব্যবসা থেকে শামীম ওসমানের আয় গতবারের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। গতবার তিনি আয় দেখিয়েছেন ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৫২ টাকা। অন্যান্য আয়ের মধ্যে রয়েছে ভাড়া বাবদ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, শেয়ার সঞ্চয়পত্র ব্যাংক আমানত সুদ ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪১ টাকা, সংসদ সদস্য ভাতা ১৫ লাখ ৪২ হাজার এবং পারিতোষিক বা বকশিস বাবদ ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
পাঁচ বছরে শামীম ওসমানের গাড়ি ও বন্দুকের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮ সালে ৫৬ লাখ টাকা মূল্যমানের টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার ভি ৮ ব্যবহার করলেও বর্তমানে তার সাথে যুক্ত হয়েছে ৮১ লাখ টাকা মূল্যমানের টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার। এছাড়া ৩৫ হাজার টাকা মূল্যমানের এনপিবি পিস্তল ছিল ২০১৮ সালে। বর্তমানে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা মূল্যমানের এনপিবি পিস্তল এবং ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যমানের ২২ বোরের রাইফেল রয়েছে তার।
২০১৮ সালের সাথে ২০২৩ সালে শামীম ওসমানের ১ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার ৭৫০ টাকার সম্পত্তি অপরিবর্তিত রয়েছে। এর মধ্যে আছে সোনারগাঁয়ে ১২৩ শতাংশ কৃষি জমি, ফতুল্লায় ১০ শতাংশ ও পূর্বাচলে ১০ কাঠা অকৃষি জমি, চাষাঢ়ায় ১৬ শতাংশ জমির উপর দোতলা আবাসিক ভবন ও ০.৭৯ শতাংশ পৈত্রিক সূত্রে মালিকানাধীন বাড়ি।
সম্পত্তি কমার পাশাপাশি বেড়েছে শামীম ওসমানের ঋণ। বর্তমানে তার ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ ২ কোটি ৬১ লাখ ২ হাজার ৩৭৬ টাকা। গত নির্বাচনে যার পরিমাণ ছিলো ১ কোটি ৫০ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫০ টাকা। ঋণের মধ্যে বিদেশে কর্মরত বন্ধু অনুপ কুমার সাহার কাছ থেকে নেয়া ২৬ লাখ টাকা ঋণ ৫ বছরেও পরিশোধ করতে পারেননি। এর বাইরে যৌথ ঋণ হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে জেড এন শিপিং লাইন্স এ ১৫ কোটি ও মাইশা এন্টারপ্রাইজে ৫ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে।
শামীম ওসমানের নামে বিভিন্ন সময় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, দাঙ্গা সংঘটনের অভিযোগ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে মামলা হয়েছে মোট ১৭টি। এর মধ্যে ৩টিতে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ, ৪টিতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে প্রত্যাহার ও বাকি ১০ মামলায় খালাস ও অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।
শামীম ওসমান তার উপর নির্ভরশীল হিসেবে স্ত্রী ও কন্যাকে দেখিয়েছেন। তবে তার একমাত্র ছেলেকে নির্ভরশীল দেখাননি। তার স্ত্রী ও কন্যার আয়ের উৎস দেখিয়েছেন ব্যবসা ও শেয়ার সঞ্চয়পত্র ব্যাংক আমানতের সুদ। উভয় খাতে স্ত্রীর বাৎসরিক আয় ৬১ লাখ ১০ হাজার ৯৩৯ টাকা। অন্যদিকে একই খাতে কন্যার আয় ২১ লাখ ৬৯ হাজার ০৩৯ টাকা। স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৬ কোটি ৮৫ লাখ ৭০ হাজার ৭০৬ টাকা। গত নির্বাচনে যার পরিমাণ ছিলো ৬ কোটি ৯২ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮৯ টাকা। স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তি বলতে রয়েছে কেবল পৈত্রিক সূত্র পাওয়া ১৫ শতাংশ জমি। স্বর্ণালঙ্কার হিসেবে বিয়েতে পাওয়া ৪০ তোলা স্বর্ণের বাইরে আর কিছুই নেই তার।
অন্যদিকে তার কন্যার স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৮৩ লাখ ৮২ হাজার ৬১৬ টাকা। বাৎসরিক ২১ লাখ টাকা আয় থাকলেও তার নেই কোন স্বর্ণালঙ্কার। স্ত্রী বা কন্যা কারও নামেই কোন গাড়ি নেই। ২০১৮ সালের হলফনামায় কন্যার কথা উল্লেখ না থাকলেও শামীম ওসমানের ওপর নির্ভরশীলদের নামে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩৫ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে বলে উল্লেখ ছিল।