বিএনপির অনুপস্থিতিতে বড় স্বপ্ন জাতীয় পার্টির
২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধ কিংবা সমঝোতায় নির্বাচন করে আসা জাতীয় পার্টি আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামী বিরোধী ভোটারদের ভোটে জয়ের স্বপ্ন দেখছে। অন্তত ১৫১টি আসনে জয় নিয়ে সরকার গঠনের প্রত্যাশা দলের নেতাদের।
বুধবার রাতে গুলশানে মুজিবুল হক চুন্নু এবং জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে।
বৈঠকে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনা হয়নি জানালেও বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, জাপার পক্ষ থেকে প্রথমে ৫০টি আসনের চাওয়া ছিল পরে সেই সংখ্যা ৩৫-৪০ এর মধ্যে নেমে আসে। কিন্তু সে বিষয়েও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি বুধবারের বৈঠকে।
বৈঠকের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়নি। তার প্রয়োজনও নেই। তিনি বলেছেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, এবার জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।'
বৈঠকের বিষয়ে চুন্নু বলেন, 'আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভালো মনোভাব আছে। গত পাঁচ বছরের নির্বাচনে অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। এখনো সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে ভয় আছে। সারাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারলে '৯১ সালের মতো নীরব বিপ্লব হয়ে যেতে পারে। আমরা আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা বলিনি, প্রয়োজনও নেই। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ চেয়েছি। তারা (আওয়ামী লীগ) আশ্বস্ত করেছেন।'
জাপা মহাসচিব আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগের পক্ষে যত ভোট আছে, আওয়ামী লীগবিরোধী তারচেয়ে বেশি। এন্টি আওয়ামী লীগ ভোটাররা যদি আসতে পারে, নীরব ভোট বিপ্লব হবে। এন্টি আওয়ামী লীগ ভোট আছে বলেই জাতীয় পার্টি নির্বাচন করছে। ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। আওয়ামী লীগ দল যদি গণতান্ত্রিক দল হয় তাহলে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে।'
তবে বিগত নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণ করলে এমনটা হওয়া সম্ভব বলে প্রতীয়মান হয় না। কারণ ২০১৮ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধ হয়েই নির্বাচন করে জাতীয় পার্টি। ২০১৪ সালে জোটে নির্বাচন না করলেও জাতীয় পার্টির সাথে সমঝোতা হওয়া আসনগুলোতে কোনও প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ, এবং সেই আসনগুলোতেই জয় পায় জাতীয় পার্টি। বাকি আসনগুলোতে অনেক বড় ব্যবধানে হারে প্রার্থীরা।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৪৯টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ২৭টি আসনে জয় পায়। সব মিলিয়ে পায় ৪৯,২৬,৩৬০ ভোট। আর বিএনপি ২৬০ আসনে প্রার্থী দিয়ে ভোট পেয়েছিল ২ কোটি ২৮ লাখের মতো।
২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতা করে ৮৬টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ভোট পায় ১২ লাখের মতো।
২০১৮ সালে জাতীয় পার্টি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে ১৭৮টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ২২টি আসন পায়। আর ভোট পায় ৪৪ লাখের কিছু বেশি। আর বিএনপি ২৫৬ আসনে প্রার্থী দিয়ে পায় ১ কোটির মতো ভোট।
জাপা মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, 'বিএনপির সমান সংখ্যক ভোট আমাদের আছে। আসন্ন নির্বাচনে আশা করছি আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটগুলো আমরা পাবো।'
বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার পরেও আওয়ামী বিরোধী মানুষ আপনাদের ভোট দিবেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আওয়ামী বিরোধী ভোটই আমাদের ভোট। আমরা আশা করতেই পারি।'
এদিকে বিগত দুই উপনির্বাচনেও দেখা যায় জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। যদি আওয়ামী বিরোধী ভোট জাতীয় পার্টির দিকে আসতো তাহলে এ ভরাডুবি কেন? এমনও প্রশ্ন উঠেছে রাজনীতি বিশ্লেষকদের মাঝে।
গত ৫ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী গোলাম ফারুক পিংকু নৌকা প্রতীকে ১,২০,৫৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আর জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী মোহাম্মদ রাকিব হোসেন লাঙল প্রতীকে পান ৩,৮৪৬ ভোট। আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রার্থীর থেকে ৩০ গুণেরও বেশি ভোট পায়।
গত ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে ৫২,৯২৩ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন বাচ্চু। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সামসুল আলম লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পান ১,৫৭২ ভোট। নৌকা লাঙ্গল থেকে প্রায় ৩২ গুণ বেশি ভোট পায়।
জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ থেকে অন্তত ৩৫টি আসনের নিশ্চয়তা পেয়েই নির্বাচনে অংশ নিতে চায় জাতীয় পার্টি। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে এতো আসন দিতে নারাজ।