বেশি মুনাফার লোভে গরুর মাংসের নির্ধারিত দাম মানছেন না ব্যবসায়ীরা
অনেক ব্যবসায়ী নির্ধারিত দামে গরুর মাংস বিক্রি করলেও কিছু ব্যবসায়ী এই দাম মানছেন না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) ক্রেতা বেশি থাকে বলে অনেকেই বাড়তি মুনাফার লোভ সামলাতে না পেরে অতিরিক্ত দামে মাংস বিক্রি করছেন।
গত বুধবার রাতে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি আগামী এক মাসের জন্য ৬৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রির ঘোষণা দেয়।
শুক্রবার ঢাকার বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, খিলগাঁও মিরপুর, মালিবাগ, সেগুনবাগিচাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, একই এলাকায় দুই রকম দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে।
বনশ্রীর এ ব্লকের ৫ নম্বর রোডে মায়ের দোয়া গোস্ত বিতান ও সুজন গোস্ত বিতানে ৭০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখা যায়। অথচ একই রাস্তায় দুই মিনিটের হাঁটা দূরত্বে স্বপন মাংস বিতানে ৬৫০ টাকা কেজি করে মাংস বিক্রি করতে দেখা যায়।
সুজন গোস্ত বিতানের দোকানি মো. সুজন বলেন, কাস্টমার পছন্দ করে মাংস নিলে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করা যায় না।
অবশ্য মো. স্বপন জানান, সমিতির নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করেছেন। সীমিত লাভ হলেও দুপুর বারোটার আগেই তার তিনটি গরু বিক্রি হয়ে যায় বলে জানান তিনি।
এদিকে আবুল হোটেলের পাশে খলিলের মাংস দোকান, রামপুরা বাজারে দুটি মাংসের দোকানে নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করতে দেখা গেলেও বাড্ডার সাদ্দাম গোস্ত বিতানে রীতিমতো ৭০০ টাকার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে। আরও দুটি দোকানেও একই দামে মাংস বিক্রি করতে দেখা যায়। বাড্ডা ডিআইটি প্রজেক্টে অবস্থিত স্বপ্ন সুপার শপে ৬৮০ টাকা কেজি ধরে গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এছাড়া মহাখালী ওয়্যারলেস গেট, উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউক প্রকল্পের পাশে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায় মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে।
তবে এর মধ্যেও কোনো কোনো জায়গায় ৬০০ টাকা কেজি দরেও মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার চাহিদা বেশি থাকায় মাংসের দোকানগুলোতে এমনিতেই ভিড় থাকে। ব্যবসায়ীদের অনেকেই বৃহস্পতিবার ৬৫০ টাকা করে মাংস বিক্রি করলেও শুক্রবার তারা ৭০০ টাকা করে মাংস বিক্রি করেছেন।
কেউ কেউ অবশ্য বলার চেষ্টা করছেন ৬৫০ টাকায় বিক্রি করলে ক্ষতি হচ্ছে।
জানা যায়, ব্যবসায়ীদের ৬৫০ টাকার মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে আগামী রবিবার জানানো হবে।
মাংস ব্যবসায় সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে কে বলেন, 'আমরা সব ব্যবসায়ীদের কাছে নির্ধারিত দামের তথ্য জানানোর চেষ্টা করেছি। কেউ যদি এই দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে, তাহল খবর পেলে আমরা তাদের তালিকা ভোক্তা অধিদপ্তরে পাঠাব যাতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।'
সম্প্রতি ৬০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করা নিয়ে ঢাকায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির তৈরি হয়। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করতে থাকে। এই অবস্থাতেই গরুর মাংসের দাম ৮০০ টাকা থেকে কমে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে আসে।
যারা ৬০০ টাকায় মাংস বিক্রি করতে থাকেন, তাদের দোকানে হঠাৎ করেই ব্যাপক বিক্রি বেড়ে যায়। মূল্যস্ফীতির প্রভাবে এবং গরুর মাংসের চড়া দামে অনেকদিন ধরে যারা মাংস কিনতে পারছিলেন না, তাদের অনেকেই নতুন করে মাংসের বাজারে আসেন।
অন্যদিকে ৭০০ টাকায় যারা মাংস বিক্রি করছিলেন, তাদের ক্রেতা কমতে থাকে। এই অবস্থায় ভোক্তা অধিদপ্তর ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশন ও মাংস ব্যবসায়ী সমিতিকে একসঙ্গে বসে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর নির্দেশনা দেয়। এই নির্দেশনা অনুযায়ী গত বুধবার বৈঠক করে ব্যবসায়ীরা ৬৫০ টাকার মাংস বিক্রির ঘোষণা দেন। যেখানে প্রতি কেজিতে ৭৫০ গ্রাম মাংস, ২০০ গ্রাম হাড় ও ৫০ গ্রামের বেশি চর্বি দেয়া যাবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়।