আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানি সম্ভব হয়নি: ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সার্টিফিকেশন না পাওয়ার কারণে ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে গরুর মাংস আমদানি করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফারনান্দো দিয়াস ফেরেস।
আজ বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে ব্রাজিলের সাও পাওলোতে আগামী জুনে অনুষ্ঠিতব্য 'মেড ইন বাংলাদেশ এক্সপো– ২০২৫' উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ব্রাজিল–বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসিসিআই) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত আরও জানান, "অনেক দিন যাবত ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে গরুর মাংস আমদানি করার কথা থাকলেও পূর্বের সরকারের সময় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সার্টিফিকেশন না পাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি হয়নি।"
"আমি বিগত সরকারের সময় বাণিজ্য মন্ত্রীর সাথে এ বিষয়ে সাক্ষাৎ করেছিলাম। প্রথমে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে অনুমতি নেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যাই। বাণিজ্য মন্ত্রীর সাথে আসা কর্মকর্তারা বাংলায় নানান নীতিমালা দেন। তবে শেষপর্যন্ত গরুর মাংস আমদানির অনুমতি পাওয়া যায়নি," বলেন রাষ্ট্রদূত।
তবে এখন অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত পাওলো ফারনান্দো দিয়াস; পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
একইসঙ্গে রাষ্ট্রদূত পাওলো ফারনান্দো আরও বলেন, "বাংলাদেশে প্রতিকেজি গরুর মাংসের দাম যদি ৫ ডলার হয়, ব্রাজিলে তা ৫ সেন্ট। এই এক্সপোর মাধ্যমে কেবল বাংলাদেশি পণ্যই ব্রাজিলে প্রদর্শিত হবে না, বরং টেকনোলজি ট্রান্সফারের সুযোগও সৃষ্টি হবে।"
তিনি বলেন, "বাংলাদেশে একটি গরু দিনে ৫ কেজি দুধ দেয়, কিন্তু ব্রাজিলের একটি গরু দিনে ৪৫ কেজি দুধ দেয়। আমরা বাংলাদেশে প্রযুক্তি সহায়তা করতে পারি, যার মাধ্যমে বাংলাদেশে আমিষের চাহিদা পূরণ হবে।"
আর এরজন্য ব্যক্তিখাতকে এগিয়ে আসতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, "ব্রাজিলের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিযোগিতামূলক নয়, বরং সহায়তামূলক। ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ব্রাজিলে রপ্তানি মাত্র ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।"
তিনি বলেন, "ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আয়োজিত 'মেড ইন বাংলাদেশ এক্সিবিশন-২০২৫' দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশি আমদানিকারকদের পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন বাজারে প্রবেশ এবং তাদের ব্যবসাকে বিশ্বব্যাপী উন্নিত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।"
প্রদর্শনীতে প্রায় ১০০-১৫০ জন বাংলাদেশি অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন বিবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি সাইফুল আলম।
এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের জন্য ব্রাজিলে ব্যবসায়িক জোট গড়ে তোলার পাশাপাশি সয়াবিন, চিনি এবং শিল্প যন্ত্রপাতির মতো উচ্চমানের পণ্য অন্বেষণের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রথমবারের মত চলতি বছরের ১৫ থেকে ১৮ জুন ব্রাজিলে বাংলাদেশি পণের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে— যেখানে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি ওষুধ, চামড়া, টেক্সটাইলসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে বলে আশা করছে আয়োজক সংগঠন।
প্রদর্শনীর বিস্তারিত তুলে ধরে বিবিসিসিআই মহাসচিব মো. জয়নাল আবদীন জানান, "ব্রাজিলে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, ফার্মাসিটিক্যালস, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি ব্রাজিল থেকে মিনারেল, ফুয়েল, অয়েল, বিফ, পোল্ট্রি, আমদানি করা যেতে পারে। বাণিজ্যের পাশাপাশি ব্রাজিলের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারবেন এই এক্সপোর মাধ্যমে।"