কোটিপতি এমপি, তবুও জামাইয়ের টাকায় ভোট করবেন তিনি!
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) নুরুল ইসলাম তালুকদার ১ কোটি ৪৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা সম্পদের মালিক। তবুও নির্বাচনের জন্য জামাইয়ের কাছে ২ লাখ টাকা ধার করবেন। এ তালিকায় তার তিন ভাইও রয়েছেন। অথচ এমপির কাছেই নগদ টাকা রয়েছে ২৫ লাখ।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, দলীয় অনুদানসহ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী খরচ ২৫ লাখ টাকার বেশি হবে না। হলফনামা অনুযায়ী, সেই সমুদয় টাকা নুরুলের কাছে নগদ রয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা বলছে, এমপি নুরুলের বছরে কৃষি খাত থেকে বার্ষিক আয় ৭০ হাজার ২০০ টাকা। পেশাগত আয় ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী পেয়েছেন ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
অথচ ১০ আগে অর্থাৎ দশম জাতীয় নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, এমপির কৃষি খাতে আয় ছিল ১০ হাজার টাকা। পেশাগত আয় ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
বর্তমানে এমপির কাছে নগদ রয়েছে ২৫ লাখ টাকা। ব্যাংকে আছে ৩০ লাখ টাকা। ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি জীপ গাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আসবাব রয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার। সব মিলে ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক তিনি।
অথচ ১০ বছর আগে এমপি নুরুলের কাছে মোট ৫ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ ছিল। এই হিসেবে গত ১০ বছরে এমপি নুরুল ইসলামের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৯ গুণ।
এবারের হলফনামায় নুরুলের স্ত্রীর রয়েছে ১৫ ভরি স্বর্ণ। দাম দেখানো হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। নুরুল ইসলামের ওপর নির্ভরশীলদের কাছে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ১০ ভরি স্বর্ণ আছে। ব্যাংকে আছে সাড়ে ৭ লাখ টাকা। এক লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোটরসাইকেল এবং ৩২ হাজার টাকা মূল্যের একটি কম্পিউটার থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফনামায়।
কিন্তু ১০ বছর আগে এমপির স্ত্রী ও তার ওপর নির্ভরশীলদের অস্থাবর সম্পদ ছিল মাত্র ১ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে ১০ বছরের ব্যবধানে নুরুল ইসলাম তালুকদারের কৃষি ও অকৃষি জমিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। অর্থাৎ, তার নামে ৪ হাজার টাকা মূল্যের ৪ বিঘা কৃষি জমি ও ১০ হাজার টাকা মূল্যের ৪ শতক অকৃষি জমির কথা উল্লেখ আছে।
তবে ১০ বছর ৪২ লাখ টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন নুরুল ইসলাম তালুকদার। তার স্ত্রীর রয়েছে একটি গাড়ি। এর সাথে পার্কিং স্থান। তবে গাড়ি ও পার্কিং স্থানের কোনো আর্থিক মূল্য উল্লেখ করা হয়নি হলফনামায়। এ ছাড়া ১০ বছর ধরে ৪ হাজার টাকা মূল্যের যৌথ মালিকানায় ১ বিঘা জমি রয়েছে। এবারের হলফনামায় বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে ৮০ লাখ টাকা ঋণের কথা বলা হয়েছে।
বগুড়া-৩ আসনের এই সংসদ সদস্য এবার নির্বাচনের জন্য তার জামাই কাজী সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ধার নেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন হলফনামায়। তাঁর তিন ভাই- আবুল কালাম আজাদ তালুকদার, রেজাউল ইসলাম তালুকদার ও আব্দুল আজিজের কাছ থেকে ২ লাখ করে টাকা মোট ৬ লাখ টাকা ধার করার ঘোষণা দেওয়া হয় হলফনামায়।
নুরুল ইসলাম জাতীয় পার্টির হয়ে গত দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে এমপি হয়েছেন। এবারও তিনি জাতীয় পার্টির হয়ে ভোট করার ঘোষণা দিয়েছেন।