প্রচারণা শেষ আজ থেকে, নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন ধার্য করা রয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে নির্বাচনি প্রচারণা।
সব ভোটার যাতে নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, 'সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন ইসির ভাবনায় শুধু নির্বাচন। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে।'
'ভোটের মাঠ এখন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে,' দাবি করেন তিনি।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ৭ জানুয়ারি ২৯৯ আসনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে।
এবার এক হাজার ৯৭০ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ২৮টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীসংখ্যা এক হাজার ৫৩৪ জন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন ৪৩৬ জন।
প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক
নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচনি আচরণবিধির অনেক নিয়ম নানাভাবে লঙ্ঘন করেছেন প্রার্থীরা। এ তালিকায় আছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের লাঞ্ছিত করা ও হুমকি দেওয়া থেকে শুরু করে তাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা।
বারবার শোকজ, তলব, সতর্ক ও জরিমানার পরও প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে পারেনি ইসি।
আচরণবিধি লঙ্ঘরের দায়ে কেবল একজন স্বতন্ত্র প্রার্থির প্রার্থীতা বাতিল ছাড়া আর কোনো কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারেনি কমিশন।
নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ তাদের সমর্থকদের এ পর্যন্ত ৫৮৯টি শোকজ ও তলব নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি।
এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে সর্বোচ্চ ১৩১টি এবং সিলেট অঞ্চলে সর্বনিম্ন ২১টি নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের জবাবে এ পর্যন্ত ৩৮৪ প্রার্থী ও তাদের সমর্থক অনুসন্ধান কমিটির কাছে সরাসরি অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি ইসি'র
'ভোটকে কেন্দ্র করে যেখানেই অনিয়ম হবে সেখানেই নির্বাচন কমিশন অ্যাকশনে যাবে; প্রয়োজনে সে কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে দেওয়া হবে,' বলেন ইসি রাশেদা সুলতানা।
এদিকে নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ইতোমধ্যে সারাদেশে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
২০১৮ সালের মতো নির্বাচনে বিতর্ক এড়াতে এবারই প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে ভোটের দিন সকালে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠাচ্ছে ইসি।
তবে যাতায়াত ও যোগাযোগ সংক্রান্ত সমস্যা এড়াতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত চার হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্রে ভোটের আগের দিন ব্যালট পেপার পাঠানো হবে।
নিরাপদ ভোটগ্রহণ নিশ্চিতে মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
নির্বাচনি পরিবেশ ঠিক রাখতে বুধবার মাঠে নেমেছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর মাঠে নামে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা। তারা নির্বাচনি মাঠে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছেন।
আর ভোটকেন্দ্রের ভেতরে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও আনসার সদস্যরা আজ (৫ জানুয়ারি) থেকে নিয়োজিত হচ্ছেন।
৬২টি জেলায় নিয়োজিত থাকছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সমতলে সীমান্তবর্তী ৪৫টি উপজেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিজিবিকে। এছাড়া সেনাবাহিনী সীমান্তবর্তী ৪৭টি উপজেলায় বিজিবির সঙ্গে এবং উপকূলীয় চার উপজেলায় কোস্টগার্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করবে।
এছাড়া দুর্গম উপকূলীয় অঞ্চলে নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে নৌবাহিনী।
বিমানবাহিনী দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের ভোটকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় হেলিকপ্টার সহায়তা দেবে। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে নির্বাচনি সহায়তা প্রদানে বিমানবাহিনীর প্রয়োজনীয়সংখ্যক হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে যৌথ সমন্বয় সেল স্থাপন করা হয়েছে।
আজ রাত ১২টা থেকে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে পাঁচ ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। নির্বাচনের দিন রাস্তায় ট্যাক্সি ক্যাব, পিকআপ, মাইক্রোবাস এবং ট্রাক চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না। এছাড়া মোটরসাইকেল চলাচলও তিনদিন বন্ধ থাকবে।
রোববার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আজ শুক্রবার রাত থেকে ৭ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত ট্যাক্সি ক্যাব, পিকআপ, মাইক্রোবাস এবং ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে। মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে আজ রাত ১২টা থেকে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত।
তবে ভোটারদের চলাচলের সুবিধার্থে ব্যক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে।
মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসি কর্তৃক প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে কমিশন এ তালিকা প্রকাশ করে।
দেশে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ছয় কোটি ৭৬ লাখ নয় হাজার ৭৪১ জন এবং নারী ভোটারের সংখ্যা পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯ জন। এছাড়া সারাদেশে এবার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৮৪৯ জন।