দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচনের দিন প্রার্থিতা হারালেন আ.লীগের মোস্তাফিজুর চৌধুরী
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো 'নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের' দায়ে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রোববার (৭ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, মোস্তাফিজুর এর আগেও বেশ কয়েকবার আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।
আজ তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হুমকি দিয়েছেন এবং এ কারণে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।
ইসি'র এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর আওতায় নির্বাচনি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিন দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার ভোটকেন্দ্রে মোস্তাফিজুরকে বহনকারী গাড়ি হামলার শিকার হয়। এ হামলায় তিনিও আহত হন।
'ঈগল' প্রতীকের সমর্থকেরা মোস্তাফিজুরের গাড়িতে হামলা করে তার মাথায় আঘাত করে বলে অভিযোগ করেন তার ব্যক্তিগত সহকারী।
যোগাযোগ করা হলে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, 'আমি এখন বাঁশখালীর অন্য এলাকায় রয়েছি। এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারব না।'
ওসি তোফায়েল আহমেদ জানান, এদিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে একটি ভোটকেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে আব্দুল গফুর নামক এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, এরপর মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী থানায় গিয়ে পুলিশকে হুমকি দিয়ে বলেন, 'তার অনুসারীদের গ্রেপ্তার করলে তিনি পুলিশের হাত কেটে ফেলবেন'।
পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে মোস্তাফিজুরকে থানায় ওসিকে হুমকি দিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তার ব্যক্তিগত সহকারী দাবি করেন, মোস্তাফিজুর গফুরকে কেন আটকে রাখা হয়েছে তা জানতে থানায় গেলে পুলিশের সঙ্গে তার 'একটু কথা কাটাকাটি' হয়।
এর আগে গত ৩ জানুয়ারি নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় জামিন পান মোস্তাফিজুর। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ২৬ ডিসেম্বর বাঁশখালীর নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন মোল্লা বাদী হয়ে মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে এ মামলা করেছিলেন।
৩০ নভেম্বর মোস্তাফিজুর রহমান মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সমর্থকদের বিশাল একটি দল নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রবেশ করে ব্যাপক শোডাউন করলে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, তার পদক্ষেপ নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন কি না — এমন প্রশ্ন করায় এই সংসদ সদস্য একজন সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে মোস্তাফিজুর ওই সাংবাদিকের প্রাণনাশের হুমকিও দেন।
ওই সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আরও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। ঘটনার পর আহত এক সাংবাদিক রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দাখিল করেন।
চট্টগ্রাম-১৬ আসনের নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম জেলা জজ আবু সালেম মোহাম্মদ নোমান অভিযোগ তদন্ত করে ৩ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে পরে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করে নির্বাচন কমিশন।
২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখা মোস্তাফিজুরের আচরণ সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটের জন্য 'হুমকিস্বরূপ' আখ্যা দিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে।
২২ ডিসেম্বর মোস্তাফিজুর তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মজিবুর রহমানের সমর্থকদের দায়ের করা মামলা গ্রহণের জন্য বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদকে ফোনে 'দেখে নেওয়ার' হুমকি দেওয়ার অভিযোগে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়। হুমকির ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছিল।