ভোট কারচুপির অভিযোগ: জাপা, তৃণমূল ও স্বতন্ত্র ১৭ প্রার্থীর নির্বাচন বর্জন
জাল ভোট, কেন্দ্র দখল ও এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়ার মতোন নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে এপর্যন্ত পাওয়া খবরে ১৭ প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে জাতীয় পার্টি (জাপা)-র ৭ জন, তৃণমূল বিএনপির দুইজন, গণফন্টের একজন এবং ৬ স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন।
এরা হলেন: ঢাকা-১০ আসনে জাতীয় পার্টির হাজী মো. শাহজাহান; কক্সবাজার-৪ আসনে জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন শিকদার ভুট্টো ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বাশার; নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে জাতীয় পার্টির আলমগীর সিকদার লোটন; সিলেট-২ আসনে গণফোরামের মোকাব্বির খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির ইয়াহিয়া চৌধুরী ও তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুর রব।
এছাড়া সিলেট-৪ আসনে তৃণমূল বিএনপির মো. আবুল হোসেন; যশোর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন; কুমিল্লা-১ আসনে জাতীয় পার্টির আমির হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার নাইম হাসান; কুমিল্লা-১১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান, কক্সবাজার-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি জাফর আলম, লালমনিরহাট-২ আসনে জাতীয় পার্টির দেলোয়ার হোসেন এবং শরীয়তপুর-২ আসনে একই দলের প্রার্থী মো. ওয়াহিদুর রহমান এবং বাগেরহাট-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জামিল হোসেন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
সিলেট-২: একসঙ্গে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন চার প্রার্থী
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে জাল ভোট, কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়াসহ নির্বাচনী পরিবেশ অনুকূল না থাকার অভিযোগে একসঙ্গে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন চার প্রার্থী। এ আসনে মোট প্রার্থী সাতজন।
রোববার (৭ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার এলাকার একটি মিষ্টির দোকানে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন চার প্রার্থী।
তারা হলেন: গণফোরামের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান (ট্রাক প্রতীক), জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া চৌধুরী (লাঙল প্রতীক) এবং তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুর রব (সোনালী আঁশ)।
এই চার প্রার্থী সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, সকাল থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট দেওয়া হচ্ছে। অন্য প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়া হচ্ছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা এ কাজে সহযোগিতা করছেন। কিন্তু সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অভিযোগ করেও তারা ফল পাননি।
এ আসনের বাকি ৩ প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের শফিকুর রহমান চৌধুরী (নৌকা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মনোয়ার হোসাইন (আম) ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের জহির (ডাব)।
আ. লীগ- জাপা সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ: নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর নির্বাচন বর্জন
একটি ভোটকেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়া হচ্ছে- এমন অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর সমর্থকদের সাথে জাতীয় পার্টির সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ, এতে দু'জন জাপার দুজন কর্মী আহত হন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আলমগীর সিকদার লোটন।
এসময় তিনি বলেন, 'ভোটের দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আমার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার খবর পাচ্ছিলাম। সকাল ১০টার দিকে রামচন্দ্রদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ও ইগল প্রতীকের দুই এজেন্ট জাল ভোট দিচ্ছিলেন। এর প্রতিবাদ করলে নৌকার সমর্থকরা আমাদের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় এলাকাবাসী আমাদের পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে পুলিশ গুলি করে। পুলিশের গুলিতে আমার দুই সমর্থক আহত হয়েছে।'
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নজরুল ইসলামের নির্বাচনের প্রধান এজেন্ট ও পৌরসভা মেয়র সুন্দর আলী। তিনি বলেন, 'পরাজয় বুঝতে পেরে তারা কেন্দ্র ভাঙচুর করেছে। তারা নিজেরাই সংঘর্ষে জড়িয়ে ভোট বর্জন করেছে।'
জাল ভোটের অভিযোগের বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদুল হক বলেন, 'জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলে আলমগীর সিকদার লোটন ও তার ভাই জাহাঙ্গীর সিকদার ঝোটনের সমর্থকরা কেন্দ্র ও ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালায়। বর্তমানে ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। প্রশাসন ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে আটক করেছে।'
যশোর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোট বর্জন
ভোট দিতে বাধা, কারচুপি ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে যশোর-১ আসনের প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
তিনি ট্রাক প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
ভোট বর্জনের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, আমি একজন প্রার্থী হওয়ার পরেও আমাকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমার স্ত্রীকেও দেওয়া হয়নি। গত ১৯ ডিসেম্বর আমার ওপর হামলাও করা হয়। এপর্যন্ত আমার ১৫০ কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে, এই নির্বাচন নিয়ে বেশিদূর যাওয়ার কোনো ইচ্ছা, ধৈর্য, কোনোটাই আমার নেই।