খৎনার সময় শিশুমৃত্যুর ঘটনায় ইউনাইটেড হাসপাতাল-২ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা
ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খৎনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসক, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং হাসপাতালের অজ্ঞাত পরিচালক, ডাক্তার ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে আয়ানের পরিবার।
আয়ানের বাবা মো. শামীম আহমেদ বাদি হয়ে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে বাড্ডা থানায় এ মামলা করেন।
অভিযুক্ত চিকিৎসকেরা হলেন, ইউনাইটেড হাসপাতালের অ্যানেস্থেশিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. সাঈদ সাব্বির আহমেদ ও সার্জারি চিকিৎসক তাসনুভা মাহজাবিন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ৩১ ডিসেম্বর ডা. সাব্বির ও ডা. তাসনুভা তাদের সমভিব্যাহারী নার্সদের সহযোগিতায় আয়ানকে বাড্ডার সাতারকুলের ইউনাইটেড হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে (ওটি) নিয়ে যান এবং আয়ানের পরিবারকে ২০–২৫ মিনিট অপেক্ষা করতে বলেন। এরই মাঝে ৩০ থেকে ৪০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ওটি রুমে প্রবেশ করেন। এর কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, ডা. মাহজাবিনের ক্লাস আছে।
'২০–২৫ মিনিট পরে আমি জিজ্ঞেস করলে আরও কিছু সময় লাগবে বলে বলে সময় পার করতে থাকে। এর এক ঘণ্টা পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকগণ দ্রুত ওটি থেকে বের হয়ে চলে যান। তারা চলে যাওয়ার পরে আরও সময় লাগবে বলে কালক্ষেপণ করা হয়। এক ঘণ্টা ২০ মিনিট পরে উক্ত হাসপাতালের বিভিন্ন ডাক্তার উদ্বিগ্নভাবে ওটি রুমে প্রবেশ করেন এবং বের হতে থাকেন। তখন আমরা বুঝতে পারি, কোনো একটা সমস্যা হয়েছে,' এজহারে বলা হয়।
শামীম এজহারে আরও বলেন, 'আমি ও আমার সঙ্গীরা জোর করে ওটি রুমে প্রবেশ করে দেখি, ডাক্তারেরা আমার ছেলের বুকে হাত দিয়ে চাপাচাপি করছেন। আমার অনুমতি ছাড়াই তারা ছেলের বুকের দুই পাশে ফুটো করে টিউব স্থাপন করেন। এরপরেও কোনো কাজ না হওয়ায় তারা তাদের নিজেস্ব ব্যবস্থাপনায় আমার ছেলেকে দ্রুত গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যান।'
শামীম তার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও তাদেরকে তা করতে দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন। আসামীদের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার জন্য ছেলের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার ছেলের চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি।
বেশি লাভের জন্য আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশের অভিযোগ তুলে শামীম বলেন, ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি ইউনাইটেড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় চিকিৎসায় অবহেলার কারণে তার ছেলের মৃত্যু হয়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অয়নকে মৃত ঘোষণা করে ৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকার বিল দেয়।
এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস) চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান জানান, কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন মুগদা হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, হাসপাতালটির একজন সহকারী পরিচালক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালক।