কারসাজি ঠেকাতে চালের বেঞ্চমার্ক দাম নির্ধারণ করবে সরকার
চালের বাজারে কারসাজিকারকদের ধরতে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের বিভিন্ন বেঞ্চমার্ক দাম নির্ধারণের বিষয়ে একমত হয়েছে বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়।
কোনো ব্যবসায়ী বা মধ্যস্বত্বভোগী ওই দামের অতিরিক্ত মূল্যে চাল বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল রোববার (২১ জানুয়ারি) অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে কৃষি, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে একাধিক কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন।
সভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে বেঞ্চমার্ক দাম নির্ধারণের প্রস্তাব দেন বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে অভিযান পরিচালনা করেও পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
'চালের বাজারে কারসাজি রোধ করতে মানভেদে বিভিন্ন চালের বস্তায় বেঞ্চমার্ক দাম হিসেবে পাইকারি পর্যায়ে ট্রেডিং প্রাইস এবং খুচরা পর্যায়ের জন্য এমআরপি [সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য] নির্ধারণ করে দিতে হবে,' বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে জানান এক কর্মকর্তা।
'কোনো ব্যবসায়ী ওই নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চাল বিক্রি করলে বা কারসাজি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। চালের বেঞ্চমার্ক দাম নির্ধারিত না থাকায় কোনো ব্যবসায়ী দাম বাড়ালেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না,' বলেন প্রতিমন্ত্রী।
সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করলেও কবে থেকে এবং কোন পদ্ধতিতে দাম নির্ধারণ করা হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান সভায় উপস্থিত থাকা অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের বেঞ্চমার্ক দাম নির্ধারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পৃথক মিটিং করবে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
সভায় কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবেরা পর্যাপ্ত পণ্য উৎপাদন ও মজুত থাকার তথ্য তুলে ধরেন।
গত বছরের জুলাই–জানুয়ারির তুলনায় এ বছরের একই সময়ে তেল, চিনি, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ৮টি পণ্যের এলসি খোলার হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
পর্যাপ্ত উৎপাদন ও মজুত থাকার পরও বাজারে চালসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চান অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। তখনই চালের বাজারসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে মধ্যস্বত্বভোগী ও কারসাজিকারকদের সক্রিয় থাকার কথা আলোচনায় উঠে আসে।
মধ্যস্বত্বভোগী ও কারসাজিকারকদের প্রতিরোধ করে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাজারে চালের কোনো সংকট নেই এবং চাল আমদানিরও কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু কিছু কর্পোরেশন ধান-চালের অতিরিক্ত মজুত করেছে। সারাদেশের মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে।
বাংলাদেশে ধানের অল্প কয়েকটি জাত থাকলেও বাজারে বিভিন্ন সুপরিচিত জাতের চাল বিক্রির সঙ্গে জড়িত ব্র্যান্ডগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভাশেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, পণ্যের কোনো সংকট নেই। তবে কিছু মহল বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে।
'সরকার তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকবে। আমরা প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব। তবে এখনও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি,' তিনি বলেন।
'ইতোমধ্যে চালের দাম কমা শুরু করেছে, আরও কমবে। প্রয়োজনে চাল আমদানি করা হবে,' জানান অর্থমন্ত্রী।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলেন, 'বাজারে কারসাজিকারকদের বিরুদ্ধে আমরা কঠিন মেজার্স [ব্যবস্থা] নেব। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিল, ছাড়পত্র বন্ধ করা হবে। নিকট ভবিষ্যতে বাজারে সুবাতাস বইবে।'
আব্দুর রউফ তালুকদারন বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর এলসি খোলা গতবারের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। তাই ডলার সংকটের কারণে নিত্যপণ্য আমদানি ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।'
'মধ্যস্বত্বভোগীরা কারসাজি না করলে বাজারে কোনো সমস্যা হবে না,' বলেন তিনি।