সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংরক্ষণে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠনের দাবি নিসচার
সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি কমাতে একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠনের দাবি জানিয়েছে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)। আজ সোমবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, এই সেল সড়ক দুর্ঘটনার যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ ও প্রকাশ করবে। আর সেলটি গঠিত হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে।
সংগঠনটির চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, 'আমরা দুর্ঘটনার কোনো তথ্য আর প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ একেক সংগঠন তাদের মতো করে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশ করছে। এতে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'এই সেল দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে সেটি কেন্দ্রীয়ভাবে প্রকাশ করবে। এর ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি ছড়াবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'গত বছর থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দুর্ঘটনার তথ্য রাখা শুরু করছে। কিন্তু পুলিশের পরিসংখ্যানের সঙ্গে সেটির মিল নেই।'
নিসচা চেয়ারম্যান জানান, ২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তার সংগঠন 'সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান' প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু তারা দেখলেন তাদের দেখাদেখি অনেক সংগঠনই সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরছে। যে কারণে এ নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, 'আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে এসেছি যে কোনো বেসরকারি সংগঠন বা কোনো ব্যক্তির পক্ষে সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র তুলে আনা সম্ভব নয়। এজন্য সরকারের একটি সার্বক্ষণিক মনিটরিং সেল ও লোকবলের প্রয়োজন। এছাড়াও প্রযুক্তিগত উন্নয়নেরও দরকার রয়েছে- যা কোনো ব্যক্তি উদ্যোগে করা সম্ভব নয়।'
তিনি আরও বলেন, 'পুলিশের প্রতিবেদন আমরা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করতাম না। কারণ তাদের প্রতিবেদন তৈরি হয় কেবল মামলার ওপর ভিত্তি করে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যেত যে নানা কারণে অনেক দুর্ঘটনারই মামলা হয়নি। যেমন, আমার স্ত্রী দুর্ঘটনায় নিহতের কোনো মামলা হয়নি।'
আবার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৩০ দিনের মধ্যে দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তি মারা গেলে সেই তথ্য সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে বিবেচিত হবে। আমাদের দেশে সেটা পুলিশ উল্লেখ করে না।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত 'গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০২৩'-এ বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা বা রোডক্র্যাশে মৃত্যু হয়েছে ২১ হাজার ৩১৬ জনের। তবে পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে মৃত্যু হয়েছে মাত্র দুই হাজার ৩৭৬ জনের।'
একইভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ২৪ হাজার ৯৪৪ জন। কিন্তু পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে এ সংখ্যা মাত্র দুই হাজার ৬৩৫ জন।
২০২১ সালের রিপোর্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১ হাজার ৫৭৮ জন মারা গেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০১৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ছিল প্রতি ১০ লাখে ১৫.৩ জন। ২০২১ সালে সেটি দাঁড়িয়েছে প্রতি ১০ লাখে ১৯ জন।
তিনি বলেন, 'বিআরটিএর তথ্যমতে গত বছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৯৫টি। এতে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ২৪ জনের। পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে ওই বছর পাঁচ হাজার ৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে চার হাজার ৪৭৫ জন। আরও দুয়েকটি সংগঠনের তথ্যও এর চেয়ে অনেক বেশি। আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে সেটিও এসব রিপোর্টের সঙ্গে মিলছে না। এতে দেখা যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সরকার, পুলিশ ও বিভিন্ন রিপোর্টে ভিন্নতা রয়েছে। আমরা মনে করি এতে করে জাতি বিভ্রান্ত হচ্ছে।'