ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়ে হাত হারোনো শিশুকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ হাইকোর্টের
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়ে হাত হারোনো শিশু নাঈম হাসান নাহিদকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ওয়ার্কশপের মালিককে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রায়ে ব্যাংকে একটি ফিক্সড ডিপোজিট করে দিতে ওয়ার্কশপের মালিক ইয়াকুব হোসেনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণের ১৫ লাখ টাকা এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি ১৫ লাখ টাকা ডিপোজিট করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
করোনা মহামারির সময় নাঈমের বাবা কর্মহীন হয়ে পড়েন। তাই নাঈম ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করে। ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় নাঈম একটি হাত হারায়।
আদালত রায়ে বলেছেন, ১০ পছর পর নাঈম ডিপোজিটের টাকা ওঠাতে পারবে। একইসঙ্গে সে এইচএসসি পাস না করা পর্যন্ত ইয়াকুব হোসেনকে প্রতি মাসে নাঈমের জন্য সাত হাজার টাকা দিতে হবে।
হাত হারানোর পর যথাযথ ক্ষতিপূরণ চেয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নাঈমের বাবা আনোয়ার হোসেনের দায়ের করা রিট আবেদন নিষ্পত্তির পর বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
'ভৈরবে শিশুশ্রমের করুণ পরিণতি' শিরোনামে ২০২০ সালের ১ নভেম্বর প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, তখন নাঈমের বয়স ছিল ১০ বছর। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। এখন তার বয়স ১৩ বছর। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামে। তার বাবা আনোয়ার হোসেনের পেশা জুতা ব্যবসা। করোনা মহামারির সময় আনোয়ার কর্মহীন হয়ে পড়েন। এ সময় সংসারের চাপ সামলাতে নাঈমকে তার মা-বাবা কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একটি ওয়ার্কশপে কাজে দেন। সেখানে কাজ করতে গিয়েই তার ডান হাতটি মেশিনে ঢুকে যায়। শেষে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কনুই থেকে হাতটি কেটে ফেলা হয়।
এ ঘটনায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শিশুটির বাবা হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে শিশুটিকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনা নিজ কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা দিয়ে অনুসন্ধান করতে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আগের ধারাবাহিকতায় রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণা করলেন হাইকোর্ট।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও অ্যাডভোকেট মো. বাকির উদ্দিন ভূইয়া। তারা কোনো ফি ছাড়াই শিশুটির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন।
ওয়ার্কশপ মালিকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।