গৃহকর্মী প্রীতির মৃত্যুর তদন্ত ও বিচারের দাবিতে সিলেটে বিক্ষোভ-মানববন্ধন
কিশোরী গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুর জন্য ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হককে দায়ী করে তার শাস্তির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়েছে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) ঢাকার মোহাম্মদপুরে সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসা থেকে পড়ে মারা যায় ১৫ বছর বয়সি গৃহকর্মী প্রীতি উরাং। এ ঘটনায় পরদিন সকালে মোহাম্মদপুর থানায় আশফাকুল ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে আসামি করে পেনাল কোডের ৩০৪(ক) ধারায় অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা করেন প্রীতির বাবা লোকেশ উরাং।
৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম হাসিবুল হক দুই অভিযুক্তের জামিন নামঞ্জুর করে তাদেরকে কারাগারে পাঠান এবং পুলিশের পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন নাকচ করে ওই দম্পতিকে তিনদিনের মধ্যে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।
প্রীতি 'হত্যার' সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে গত শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মানববন্ধন এবং রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জেলার মির্তিংগা চা বাগানে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উরাং ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা কমিটি এবং চা শ্রমিকদের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির যৌথ আয়োজনে মৌলভীবাজারের মির্তিংগা চা বাগানে বিক্ষোভ সমাবেশ অংশ নিয়ে প্রীতির বাবা লোকেশ উরাং মেয়ে 'হত্যার' বিচার দাবি করেন।
তিনি বলেন, 'স্থানীয় এক সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রীতি আশফাকুল হকের বাসায় কাজের জন্য যায়। শুরু থেকেই পরিবারের পক্ষ থেকে তার তেমন খোঁজ খবর পাওয়া যেত না। প্রীতির মৃত্যুর দিন ওই সাংবাদিক আমাদের মেয়ে মারাত্মক অসুস্থ বলে ঢাকায় নিয়ে যান। ঢাকায় পৌঁছানোর পর সরাসরি থানায় নিয়ে গেলে মেয়ের মৃত্যুসংবাদ শুনি।'
উরাং ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা কমিটির কমলগঞ্জ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক পুরণ উরাংয়ের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন প্রীতির মা নমিতা উরাং, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জহরলাল দত্ত, বাসদ জেলা সদস্য ও চা শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দীপংকর ঘোষ, চা শ্রমিকদের ১০দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির সমন্বয়ক এস এম শুভ প্রমুখ।
বক্তারা অভিযোগ করেন, শিশু প্রীতিকে স্কুলে পাঠানোর বদলে দ্য ডেইলি স্টার-এর স্থানীয় সাংবাদিক তার পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকের বাসায় কাজে পাঠিয়েছেন। তিনি প্রথমেই দেশের প্রচলিত আইনকে লঙ্ঘন করেছেন এবং সেখানে কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা আছে কি না তারও কোনো খোঁজ নেননি।
তারা আরও বলেন, 'চা শ্রমিকদের এখন সময় এসেছে বিচারের দাবিতে শক্ত আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি নিজেদের সামগ্রিক জীবনমানের উন্নয়নের জন্য তীব্র আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া যাতে আর কোনো চা শ্রমিকসন্তান শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে না পড়ে।'
সমাবেশের পরে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন উরাং ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
এদিকে শনিবার কমলগঞ্জে স্থানীয় চা বাগানের প্রাথমিক চিকিৎসক সঞ্জয় বাউরীর সঞ্চালনায় এক মানববন্ধনে প্রীতির মৃত্যুর জন্য সৈয়দ আশফাকুলকে দায়ী করে তার শাস্তি দাবি করা হয়।
মানববন্ধনে চা বাগানের শ্রমিকদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেন। বক্তব্য রাখেন মির্তিংগা চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি মন্টু অলমিক, আওয়ামী লীগ নেতা সুরুত্যান কান্তি বৈদ্য ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালীর সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, 'প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যু আসলেই দুঃখজনক। আমি প্রীতি হত্যায় জড়িতদের তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।'
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সিলেট ও মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।