রপ্তানি বাড়াতে অ্যাগ্রো প্রসেসিং সেক্টরকে বাড়তি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে: এনবিআর চেয়ারম্যান
রপ্তানি বাড়াতে সরকার অ্যাগ্রো প্রসেসিং সেক্টরকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে। এজন্য সেক্টরটিকে বাড়তি সহযোগিতাও দেওয়া হচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
গতকাল (বুধবার) আগারগাঁওয়ে এনবিআরের নিজস্ব ভবনে আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, "অ্যাগ্রো বেইজস ফুড সেক্টরটায় ভ্যালু অ্যাডিশনের পরিমাণ অনেক বেশি। এ কারণে সেক্টরটিকে গুরুত্ব দিচ্ছি, যাতে রপ্তানি বাড়ে।"
তিনি বলেন, "আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশেই অ্যাগ্রো প্রসেসিং পণ্যের বড় মার্কেট রয়েছে। এই মার্কেট আমরা ধরতে চাই। এজন্য যত ধরনের যৌক্তিক সহযোগিতা দরকার তার সবটাই আমরা দিব। শুধু খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে সুযোগের অপব্যবহার না হয়।"
এর আগে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, "এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে কোল্ড স্টোরেজের তিনটি চেম্বারে গাজর সংরক্ষণ করা হবে। বর্তমানে এর সক্ষমতা তিন হাজার মেট্রিক টন হলেও ধারাবাহিকভাবেই এটা বাড়ানো হবে।"
ইশতিয়াক আহমেদ আরও বলেন, "তবে এর জন্য সহযোগিতা দরকার। আমদানি হয়ে যে-সব গাজর আসে সেগুলোর উপর শুল্ক বাড়ানো না হলে স্থানীয়ভাবে কোল্ড স্টোরেজ ব্যবসাকে লাভজনক করা যাবে না। একইসঙ্গে কৃষকরাও গাজর চাষ বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত হবে।"
গত বছর সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন গাজর আমদানি করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, "এমনিতেই গাজরে ৫৮ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা আছে। তবে ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে উঠলে সেটার জন্য আমাদের সাপোর্ট সব সময়ই থাকবে। আমরা চাই যাতে কৃষিপণ্যের আমদানি যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা যায়।"
প্রাক-বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসর'স অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) প্রতিনিধিরা তাদের প্রস্তাবনায় বলেন, "চাল, মুড়িসহ বেশকিছু খাদ্যপণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ২ শতাংশ উৎসে কর রয়েছে। কিন্তু এই তালিকার বাইরে ধানের মত কিছু পণ্য আছে সেগুলোতে কর দিতে হয় ৭ শতাংশ। এগুলোও যদি তালিকায় যুক্ত করা হয় তাহলে খরচ কমে আসবে।"
এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান চিড়া ও মুড়ির উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট মওকুফ করে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি বলেন, "যখনই এগুলো প্যাকেট করা হবে তখনই এগুলোতে বাড়তি ভ্যাট আরোপ করা হবে।" সব প্যাকেটেই ভ্যাট বাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান।
অনুষ্ঠানে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাবনা দেয়া হয়। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ তার প্রস্তাবনায় এই ইন্ডাস্ট্রির কর্পোরেট করহার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি করেন। এছাড়া ফিডের কিছু বিকল্প উপাদান ভারত থেকে আমদানির জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা, কিছু উপাদান শুল্কমুক্ত পণ্যের এআরওতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দেন।
শামসুল আরেফিন বলেন, "ফিডের কিছু বিকল্প উপাদান আমরা ভারত থেকে আমদানি করতে পারলে ফিডের দাম কমাতে পারবো, যা ডিম ও মুরগির দাম কমাতে ভূমিকা রাখবে।"
এছাড়া বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, কিছু সার আমদানির ক্ষেত্রে প্রকৃত দামের চেয়ে বেশি দামে অ্যাসেসম্যান্ট করতে হয়। যেমন জিএথ্রি সারের দাম কেজি প্রতি ২৭ ডলার হলেও অ্যাসেসমেন্ট করতে হয় প্রতি কেজি ৫৮ ডলারে। এতে করে সারের খরচ বেড়ে যায় বলে প্রকৃত দামের উপর অ্যাসেসমেন্টের দাবি করা হয়।
সংগঠনটি জানান, জিংক সালফেট, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট, চিলেটেড জিংক, সল্যুবর বোরন, এসওপি সারগুলো আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি থাকলেও এসআরওতে এইচএস কোড নম্বরগুলো উল্লেখ না থাকায় ভ্যাট দিতে হচ্ছে। এই কোডগুলো এসআরওতে সংযুক্ত করার দাবি করে সংগঠনটি। একইসঙ্গে বাণিজ্য সংগঠনগুলোকে আয়কর বহির্ভূত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করার দাবি করে সংগঠনটি।
অন্যদিকে আরেকটি অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেছেন, "বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের কৃষি পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এক্ষেত্রে চলতি বছরের জন্য এই লক্ষ্যমাত্রা ৩ বিলিয়ন ডলার।"
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, "গত অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানির পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার ছিল। আমরা তৈরি পোশাকের বাইরে রপ্তানিকে বহুমুখী করতে চাই।"