পাওয়া গেল জীবনানন্দের শেষ স্মৃতি, ৭৫ বছর ধরে আগলে রেখেছে চক্রবর্তী পরিবার
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ যে চেয়ারটিতে বসে লিখেছেন তাঁর অন্যতম প্রিয় লেখাগুলো, সেই চেয়ারটির সন্ধান পাওয়া গেছে।
৭৭ বছর আগে জীবনানন্দ দাশ বরিশাল ত্যাগ করার পর তার জন্মভিটাও বেহাত হয়ে যায় এবং তাঁর শেষ স্মৃতি বলতে কিছুই ছিল না। তাঁর চেয়ারটির সন্ধান পাওয়ায় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এটিই তাঁর শেষ স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া শিশু সাহিত্যিক তপংকর চক্রবর্তী বিষয়টি টিবিএসকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, চেয়ারটি ৫১ বছর ধরে তাঁর কাছে ছিল। চেয়ারটি একবার লুট হয়ে যাওয়ার পরে সেটির খোঁজ করে তিনি ৩০ টাকায় চেয়ারটি আবার কিনে বাসায় নিয়ে আসেন। কিন্তু চেয়ারটি তাঁর পরিবারের কাছে ৭৫ বছর ধরে আছে।
তপংকর চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তাদের পরিবারের সাথে কবি জীবনানন্দ দাশের পরিবারের সখ্যতা ছিল। তাঁর পিতা শৈলশ্বর চক্রবর্তী যুগান্তর বিপ্লবী দল ও তরুণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি কংগ্রেসে যোগ দিয়ে বরিশাল জেলার সম্পাদক নির্বাচিত হন।
তিনি আরো বলেন, "১৯০৩ সালে জীবনানন্দের পিতার বড়ভাই হরিচরন দাশগুপ্ত বগুড়া রোডে জায়গা কিনে ভিটে করেন। আমাদের জানা মতে ওখানে তাদের ৫ থেকে ৬ বিঘা জমি ছিল। সেই জমিতে জীবনানন্দের পিতামহ সরবানন্দ দাশগুপ্ত সাধনকুটির নামে একটি খড়ের বাড়ি করেছিলেন। তিনি সেই বাড়িতেই থাকতেন। পরে সাধনকুটিরের নাম পরিবর্তন করে সর্বানন্দ ভবন করা হয়। সেখানেই জীবনানন্দের পুরো পরিবার বাস করতেন।"
জীবনানন্দের পিতার বোন স্নেহলতা দাশ বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালেয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। কিন্তু ১৯৫০ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ে তিনি বরিশাল থেকে চলে যান।
বাবার বক্তব্যের বরাত দিয়ে তপংকর চক্রবর্তী বলেন, "স্নেহলতা দাশ বরিশাল ছাড়ার দুই বছর আগে ১৯৪৮ সালে আমার বাবাকে জীবনানন্দ যে চেয়ারটিতে বসে লিখতেন সেটি দিয়ে দেন। তিনি বাবাকে বলেন, 'মিলু (জীবনানন্দ দাশ) এই চেয়ারে লেখালেখি করতো। ওতো দেশে নেই, চেয়ারটি খালি পড়ে আছে। আমার খুব খারাপ লাগছে। তুমি (শৈলশ্বর চক্রবর্তী) এই চেয়ারটি নিয়ে যাও।' বাবা চেয়ারটি আমাদের বাসায় নিয়ে আসেন। চেয়ারটি সেগুন কাঠের ও কালো রং করা ছিল। ভিতরে লোহাও নড়বড়ে হয়ে ছিল। পরে আমরা মিস্ত্রী দিয়ে শক্ত করি ও চেয়ারটিতে লাল রঙের বার্নিশ করি।"
তপংকর চক্রবর্তী জানান, ১৯৭১ সালে তাদের বাড়ি লুট হলে চেয়ারটিও লুট করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ৭২ বাজার রোডে একটি চেয়ারটির সন্ধান পাওয়া যায়। চেয়ারটি আলাদা ভাবে বানানোর কারণে একে সহজে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। দোকানি চেয়ারটি ২০ টাকা কিনেছিলেন।
পরে তপংকর চক্রবর্তী সেই দোকানির কাছ থেকে ৩০ টাকায় চেয়ারটি কিনে এনে বাসায় রাখেন। সেই থেকে চেয়ারটি তাদের কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোডের বাড়িতে রয়েছে।
তিনি বলেন, "চেয়ারটি একটি ইতিহাস। আমি চাই জীবনানন্দের কোন স্মৃতিশালা বা ইনস্টিটিউট হলে সেখানে চেয়ারটি দিতে। কিন্তু তেমন কোন প্রতিষ্ঠান না পাওয়ায় দিতে পারছি না।"
কবি জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী।
দিবসটি উদযাপনে সরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকলেও বিভিন্ন আয়োজনে স্মরণ করা হচ্ছে কবি জীবনানন্দ দাশকে।
সকাল ৯টায় জাতীয় কবিতা পরিষদ জীবনানন্দ দাশের জন্মভিটায় অবস্থিত মিলনায়তনে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পুরস্কার বিতরণী, আলোচনা সভা ও কবিতা পাঠের আয়োজন করেছে।