বেইলি রোডে ভবনে আগুন: স্ত্রী-দুই সন্তান আর নেই, জানানো হয়নি আশিককে
আশিক হঠাৎ হঠাৎ চিৎকার করে বলছেন, 'আমি নাজিয়াকে ছাড়া বাঁচব না।' তার পাশে থাকা মামাকে ডেকে বলছেন, একটা এয়ারবাসের [এয়ার অ্যাম্বুলেন্স] ব্যবস্থা করতে; স্ত্রী-সন্তানকে দেশের বাইরে নিয়ে যাবেন তিনি।
কিন্তু আশিককে তখনো জানানো হয়নি, তার স্ত্রীসহ দুই সন্তানই নিহত হয়েছেন। স্বজনেরা তাকে কেবল জানিয়েছেন, আগুনে এক সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বেইলি রোডের একটি বাণিজ্যিক ভবনে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৫ জন নিহতের খবর পাওয়া গিয়েছে। ওই আগুনে মারা গেছেন বেইলি রোডের বাসিন্দা আশিকের স্ত্রী নাজিয়া ও তাদের দুই সন্তান।
স্বজনদের একজন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'নাজিয়ার স্বামী আশিক জানেন তার ছোট শিশু মারা গেছে। স্ত্রী ও বড় ছেলে বেঁচে আছেন। যদিও তাদের তিনজনই মারা গেছেন।'
আরও পড়ুন: বেইলি রোডে ভবনে আগুনে নিহত অন্তত ৪৫, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা
নাজিয়ার বয়স ৩০ বছর বলে জানান ওই স্বজন। দুই ছেলে-মেয়ের আনুমানিক বয়স ছয়–আট বছর।
বৃহস্পতিবার রাত ২টা পাঁচ মিনিটের দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে [ঢামেক] ৩৩ জন মারা গেছেন। [শেখ হাসিনা] বার্ন ইনস্টিটিটিউটে এখন পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন।'
রাত আড়াইটার পরে আরও দুজনের মৃতদেহ ঢামেকে আনা হয় বলে রমনা থানার সূত্রে জানা গেছে। পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'যারা এখন পর্যন্ত বেঁচে আছেন, তাদের বেশিরভাগের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন।'
'বাইরে [অন্য হাসপাতালে] কেউ আছে কি না এখনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ঢামেক ১৪ জন ও বার্ন ইনস্টিটিউটে আটজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবাইকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে,' তিনি বলেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাত ১টা পর্যন্ত ভবনটি থেকে ৪২ জনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে আরও ৭৫ জনকে।
এর আগে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১৩টি ইউনিট ওই ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানান কর্মকর্তারা।
ভবনের নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ভোর সোয়া ৩টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।
'ফায়ার সার্ভিস থেকে সব তথ্য পেলেই আমরা প্রমাণ সংগ্রহ শুরু করব। সংগৃহীত আলামত আমাদের ল্যাবে পাঠানো হবে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আগুন লাগার কারণ জানা যাবে,' বলেন তিনি।