বেইলি রোড ট্র্যাজেডি: বাবার সঙ্গে শেষ ফোনকলে নিমু বলেছিল–‘আমাকে বাঁচাও, আমি আটকা পড়েছি’
বান্ধবী আর তুতো বোনদের নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিল নিমু। ভবনে আগুন লাগলে ভেতরে আটকা পড়ে তারা ছয়জন।
বেইলি রোডের ভবনের আগুন যখন নিচ থেকে ওপরের দিকে ক্রমশ তীব্র হচ্ছিল, তখন ১৮ বছর বয়সি নিমু সর্বশেষ তার বাবাকে ফোন করে। ফোনের অপর প্রান্তে থেকে অসহায় বাবা শুনেছিলেন মেয়ের আকুতি: 'বাবা, আমাকে বাঁচাও, আমি আটকে পড়েছি।'
এরপরই নুশরাত জাহান নিমুর মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। বাবা আবদুল কুদ্দুস ঘটনাস্থলে হন্তদন্ত হয়ে এসে জানতে পারলেন, তার মেয়ের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডে ভবনে আগুনে নিহত অন্তত ৪৫, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বেইলি রোডের একটি বাণিজ্যিক ভবনে আগুনের ঘটনায় অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। ভবনের নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানিয়েছে সিআইডি।
এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা আবদুল কুদ্দুস ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের মেঝেতে ভারাক্রান্ত কন্ঠে চিৎকার দিয়ে মেয়ের জন্য আহাজারি করছেন। তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, 'মেয়েটা মৃত্যুর সময় বারবার বাবা বলে চিৎকার দিয়েছিল।'
আরও পড়ুন: বেইলি রোডে ভবনে আগুন: স্ত্রী-দুই সন্তান আর নেই, জানানো হয়নি আশিককে
নিমু তার খালাতো বোন আলিশা ও রিয়াসহ পাশের বাসার আরও তিনজন বান্ধবীর সঙ্গে ভবনটির একটি রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিল। তারা ছয়জনই আগুনে মারা গেছেন বলে টিবিএসকে জানান আলিশার মামা।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট ওই ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানান কর্মকর্তারা। ভবনটি থেকে ৪২ জনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
রাত ২টা পাঁচ মিনিটের দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে [ঢামেক] ৩৩ জন মারা গেছেন। [শেখ হাসিনা] বার্ন ইনস্টিটিটিউটে এখন পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন।'
আরও পড়ুন: বেইলি রোডে ভবনে আগুন: মালয়েশিয়ার পাঠ চোকানো আর হলো না রিয়ার
রাত আড়াইটার পরে আরও দুজনের মৃতদেহ ঢামেকে আনা হয় বলে রমনা থানার সূত্রে জানা গেছে। পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'যারা এখন পর্যন্ত বেঁচে আছেন, তাদের বেশিরভাগের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন।'
'বাইরে [অন্য হাসপাতালে] কেউ আছে কি না এখনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ঢামেক ১৪ জন ও বার্ন ইনস্টিটিউটে আটজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবাইকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে,' তিনি বলেন।
ভবনের নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ভোর সোয়া ৩টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।
'ফায়ার সার্ভিস থেকে সব তথ্য পেলেই আমরা প্রমাণ সংগ্রহ শুরু করব। সংগৃহীত আলামত আমাদের ল্যাবে পাঠানো হবে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আগুন লাগার কারণ জানা যাবে,' বলেন তিনি।