বেইলি রোডে আগুন: মর্গে থাকা শিশু ও মায়ের পরিচয় মিলল, বাঁচেননি বাবাও
ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মর্গের মেঝেতে শুইয়ে রাখা তিন বছর বছর বয়সী মেয়েশিশু ও তার মায়ের পরিচয় শনাক্ত করা গিয়েছে। শিশুটির বাবা কাস্টমস কর্মকর্তা শাহ জালাল উদ্দিন (৩৫)। তিনি উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালিয়া পালং গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবুল কাশেম এর মেঝ সন্তান।
বেইলি রোডের আগুনের ঘটনায় স্ত্রী মেহেরুন নেছা হেলালি মিনা (২৪) ও তিন বছরের মেয়ে ফাহিরুজ কাশেম জামিরার পাশাপাশি শাহ জালালও নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় উখিয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
শিশুটির পরনে ধূসর রঙের হাফ হাতা গেঞ্জি আর নীল পায়জামা। শিশুটির হাতে, মুখে ও জামাকাপড়ে ছাই লেগে ছিল। পায়ে ছিলোনা জুতা, দুই পায়ে ছিল দুটো মোজা। বাঁ পায়ের মোজাটি অর্ধেক খোলা। পাশেই শুইয়ে রাখা ছিল মায়ের মরদেহ।
নানা মুক্তার আলম হেলালি গতকাল (শুক্রবার) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালে মর্গে মরদেহগুলো শনাক্ত করেন। নিহত শাহ জালাল কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে কর্মরত ছিলেন।
মুক্তার আলম হেলালি জানান, তার মেয়ে ও মেয়ের স্বামী শাহ জালালের তিন দিনের ছুটিতে খাগড়াছড়ি যাওয়ার কথা ছিল। তিনি কয়েকদিন আগে মেয়ের বাসায় আসেন। তার আরেক মেয়ে দিনাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে ঢাকায় আসে। ঘটনার সময় ওই মেয়ে রাজধানীর মনিপুরে বান্ধবীর বাসায় ছিল। ঘটনার পর থেকে তাদের মোবাইলে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে ঢামেক হাসপাতালে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মরদেহ দেখে শনাক্ত করেন।
কাস্টমস কর্মকর্তার বড় ভাই শাহজাহান সাজু মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তার ভাই শাহ জালাল বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে যান। এসময় অগ্নিকাণ্ডে স্ত্রী ও সন্তানসহ তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, তার ভাইয়ের শ্বশুর ও কাস্টমস অফিসের কর্মকর্তারা মরদেহ শনাক্ত করতে পেরেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে মরদেহ তিনটি গ্রহণ করেছেন ভাই শাহজাহান সাজু। তিনি জানিয়েছেন, মরদেহবাহী গাড়ি নিয়ে তিনি ঢাকা থেকে মরিচ্যা গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।
হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরি জানিয়েছেন, একই পরিবারের সবাইকে একসাথে হারিয়ে ফেলা এর চেয়ে বড় কষ্ট আর নেই। মরদেহ নিয়ে আসার ব্যাপারে পরিবারের সাথে কথা বলা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।