সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বেশি পরিবহন, আবাসনে; কম স্বাস্থ্য, শিক্ষাখাতে
১৮,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ কমিয়ে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে সরকার।
সংশোধিত এডিপিতে কোনো কোনো খাতে গত বছরের তুলনায় কম, আবার কোনোটিতে বরাদ্দ বেশি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল (১২ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় অনুমোদিত সংশোধিত এডিপিতে ১,৪৮৮টি প্রকল্পে মোট ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এর মধ্যে ১ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আসবে সরকারি তহবিল থেকে এবং বাকি ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সরবরাহ হবে বৈদেশিক সহায়তা থেকে।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ ২৫.৮২ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫.৪৭ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এছাড়া, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলী খাতে ১১.৪৩ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ৮.১৫ শতাংশ, শিক্ষা খাতে ৭.০৩ শতাংশ, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ খাতে ৫.৮৩ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ৪.৯৩ শতাংশ, কৃষি খাতে ৪.২১ শতাংশ, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ১.৮৯ শতাংশ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ১.৪৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় পরিবহন ও যোগাযোগ, আবাসন, পরিবেশ, কৃষি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, স্থানীয় সরকার এবং গ্রামীণ উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমেছে।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালাম গণমাধ্যমকে বলেন, অগ্রাধিকার থাকলেও স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের ব্যয় করার ক্ষমতা সীমিত হওয়ায় এ খাতগুলোতে বরাদ্দ কমেছে।
অন্যদিকে, অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতার পাশাপাশি পরিবহন অবকাঠামোর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে বরাদ্দ বেশি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ও রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হলেও আগামী অর্থবছরে এর গতি বাড়বে।
এছাড়া, প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বিক তদারকি জোরদার করার নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ বছরের সংশোধিত এডিপি
২০২৩ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার ১৭,৪৩৪ কোটি টাকা বা ৭.৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরে আরএডিপির আকার ছিল ২.২৮ লাখ কোটি টাকা।
এরমধ্যে সরকারি তহবিলের পরিমাণ ৯,০০০ কোটি টাকা বা ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আরএডিপিতে বৈদেশিক সাহায্যের আকার বেড়েছে ৮,৪৩৪ কোটি টাকা বা ৫.৫১ শতাংশ।
এদিকে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য মূল এডিপিতে যে ৯,৭০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল, তা সংশোধিত বা আরএডিপিতেও অপরিবর্তিত রয়েছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮,৯৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে, এটিও মূল এডিপির থেকে অপরিবর্তিত।
চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি পেয়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ; যার পরিমাণ ৬,৮৪১ কোটি টাকা। যদিও মূল এডিপিতে প্রথমে এই খাতে ১,৭৪৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
আরএডিপিতে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য ৪,৭৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মূল এডিপিতে ছিল ৫,৫০০ কোটি টাকা।
এদিকে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সংশোধিত এডিপি বরাদ্দে এগিয়ে রয়েছে; এই খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৯,৯০৫ কোটি টাকা বা ১৬.২৯ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের এডিপির তুলনায় আরিএডিপিতে 'ব্লক অ্যালোকেশন' বা বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা বেড়েছে সর্বোচ্চ ২৮৩ শতাংশ।
সংশোধিত এডিপিতে বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৭,৯৮৪ কোটি টাকা। প্রাথমিক এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৪,৬৯৭ কোটি টাকা।
ব্লক অ্যালোকেশন হল একটি সংরক্ষিত তহবিল, যা বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজন মোটানোর জন্য আলাদা করে রাখা হয়। পরিকল্পনা কমিশন তার 'বিশেষ প্রয়োজনে' এই তহবিল থেকে অর্থ ব্যয় করতে চাইলে আগে অবশ্যই অর্থ বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।